ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নিবন্ধন,ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট, নিবন্ধনের সংখ্যা নির্দিষ্ট ও বার্থ-ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়্যার হালনাগাদসহ বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নিবন্ধন চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটির অনেক ওয়ার্ডে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ই-পেমেন্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন কোনো কোনো আবেদনকারী।
এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০টি ও জোন অফিসের ক্ষেত্রে নিবন্ধন আবেদনের তথ্যের যথার্থতা যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ ১০০টি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে গত ২৭ আগস্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের সফটওয়্যার উন্নয়নে গত জুলাই মাসে হালনাগাদ করা হয়।
জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জন্ম নিবন্ধনের সংখ্যা নির্দিষ্ট করার এক মাস পরও অনেক স্থানে নিবন্ধন শুরু হয়নি। আবার কোনো কোনো নিবন্ধক হঠাৎ করে এক দিনে ৫০০ পর্যন্ত নিবন্ধন করছেন।
কোথাও অথরাইজড ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডকে অপব্যবহার করে এক দিনে বা রাতে বিপুলসংখ্যক নিবন্ধন সম্পন্ন করছেন। এতে বিডিআরআইএস সফটওয়্যারের ওপর চাপ বেড়ে যায়।
শতভাগ জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ প্রথম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-সিআরভিএস ডিকেইডের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন ও ৫০ ভাগ মৃত্যু নিবন্ধন করার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
বর্তমানে সারা দেশে জন্ম নিবন্ধন করেছে ২০ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৪ জন। দ্বৈত নিবন্ধনের কারণে সংখ্যাটি দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বড় বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ভালো স্কুলে ভর্তি বা বয়স কমাতে একাধিক জন্ম নিবন্ধন এ জন্য দায়ী বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬।
এই পরিস্থিতিতে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করি নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করি’—এই প্রতিপাদ্যে এক কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন করছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা একরামুল হক সায়েম তাঁর দুই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে এক মাস ধরে ঘুরছেন। সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, শুনেছিলাম এখন থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে শোনেন সেখানে এখনো জন্ম নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়নি।
তাঁকে আঞ্চলিক কার্যালয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়। এ কারণে তিনি কারওয়ান বাজারে অঞ্চল-৫-এ খোঁজ নিতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন নোটিশে লেখা, জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে চালু হয়েছে। জনসাধারণকে তাঁর নিজ নিজ ওয়ার্ডে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা বকুল আহমেদ দুই বছর বয়সী ছেলের জন্ম নিবন্ধন করানোর জন্য গত এক মাস ধরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঘুরছেন। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক অফিসে খোঁজ নিতে। তিনিও গিয়ে দেখেন, জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে চালু হয়েছে।
এ ছাড়া গত আগস্টে এক বিজ্ঞপ্তিতে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় জানিয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় এখন থেকে আবেদন ফরম জমা নেওয়া, সংশোধন ও সনদ দেওয়ার কাজ করবে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।
জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চত করার জন্যই নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। শতভাগ জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কার্যক্রম বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, শতভাগ জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করার জন্য কাজ চলছে। জন্ম নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
৬ অক্টোবর ২০২৩
এজি