জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যে বিশ্বের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। জাতিসংঘ ১৯৬৯ সালে পিতা-মাতার স্বাধীনভাবে সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর ১৯৭৫ সালেই বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এ লক্ষ্যেই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সেখানে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর কোনো দেশ এমন সাফল্য দেখাতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নানা পদ্ধতিতে ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ’ পদ্ধতি ব্যবহারে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছে বিশ্বের কোনো দেশই সেভাবে চালাতে পারেনি। ফলে সাফল্য এসেছে এ ধারায়। বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালে সক্ষম দম্পতি প্রায় ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। প্রতি দশকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ২০০০ সালে এ হার বেড়ে ৫৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১১ সালে এর হার ছিল ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বর্তমানে ব্যবহারের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশে।
এর মধ্যে শহর এলাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬৪ শতাংশ এবং পল্লী এলাকায় ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং যে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করছে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ।
অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে এখনো ৫৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়ার আগেই। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ১৮ দশমিক ১ শতাংশের। ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫ম এবং ১৫ বছরের আগের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৬ষ্ঠ অবস্থানে। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ৩১ ভাগই প্রথম বা দ্বিতীয় বারের মতো গর্ভবতী হন। এই বয়সী কিশোরীদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৪৭ শতাংশ। এদের মধ্যে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার ৫৪ দশমিক ১ ভাগ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বল্পোন্নত দেশসমূহে ১৯৯৪ সালে যেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, বর্তমানে তা বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, ১৯৯৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ২৫ বছর আগে স্বল্পোন্নত দেশে প্রতি ১ হাজার নারীর মধ্যে ৮ জন নারী গর্ভকালীন বা প্রসবকালীন সময়ে মারা যেত। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০০৪ সালে ছিল ৩ দশমিক ২০ জন, যা বর্তমানে কমে ১ দশমিক ৬৯ হয়েছে। স্বল্প আয়ের দেশে ২৫ বছর আগে একজন নারী কমপক্ষে ৬টি সন্তান জন্ম দিতেন, যা বর্তমানে ৪-এর নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ২ দশমিক ৫ জন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের এমসিএইচ- সার্ভিসেস ও লাইন ডাইরেক্টর এমসি-আরএএইচ এর পরিচালক ডা.মোহাম্মদ শরীফ জানান,সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত একটি মানবাধিকার। প্রতিটি পরিবার পরিকল্পিত হোক, সকল দম্পতি যেন স্বাধীনভাবে সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাদের ওপর যেন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া না হয়- সেটা তথ্য ও সেবা দিয়ে নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৭টি অপারেশনাল প্ল্যান হাতে নেয়া হয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা ব্যবহারের হার ৭০ ভাগে উন্নীত করা। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রান্তিক পর্যায়ে মেলা এবং গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের বহুমুখী কর্মকান্ডে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার প্রতিদিনই বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ পরিবার পরিকল্পনার অপূর্ণ চাহিদার হার পূরণের চেষ্টা চলছে। যারা পদ্ধতি গ্রহণ করতে চান কিন্তু সেখানে পৌঁছানো যাচ্ছে না, যোগাযোগ গ্যাপ রয়েছে, তাদের কাছে যাওয়ার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ দেয়ার জন্য একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যার নম্বর-১৬৭৬৭ (সুখী পরিবার)। এছাড়া দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে জনবল নিয়োগ, প্রথম প্রসব বিলম্বিত করতে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ, এনজিও’র সাথে সমন্বিত কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে ।
ঢাকা ব্যুরো চীফ ২৮ মে, ২০২০ (বাসস/ইউনিসেফ)
এজি