কিশোর বয়সে চট্টগ্রামে সিএনজি-স্কুটার চালিয়েছেন কচুয়ার আলী হোসেন (৭০)। ১৯৮৮ সালে যৌবন বয়সে সৌদি প্রবাস পাড়ি দিয়েছেন। প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে হাল ধরেছিলেন অভাবী সংসারের। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন শূন্য হাতে।
দেশে ফিরে এসেই বাবার কাছে প্রবাসে উপার্জিত টাকার হিসাব চাইলেন। কিন্তু পিতা মোঃ আব্দুল মালেক পুত্রের টাকার হিসাব যথাযথ ভাবে দিতে পারেননি। এ নিয়ে আলী হোসেন চরম উত্তেজিত হয়ে বাবা আব্দুল মালেকের ডান পায়ে লাথি মারেন।
এতে তার বাবা আব্দুল মালেক পুত্রের এমন অশোভনীয় আচরণে কষ্ট পেয়ে অবাধ্য পুত্রের ডান পা হারানোর পাশাপাশি ও ১২ বছর ভিক্ষা করে সংসার চালাবে বলে অভিশাপ দেয়। বিধিবাম-যে কথা, সেই কাজই হলো।
সামাজিক শিক্ষার অংশ মনে করে চাঁদপুর টাইমসের সাথে কথা হয় এ ঘটনায় পিতার অভিশাপের শিকার আলী হোসেনে সাথে। তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসা কষ্টের কিছু কথা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আলী হোসেন হঠাৎ ওই বছর হোচট খেয়ে ডান পায়ে ব্যথা পেয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ভিটে-বাড়ি ও ধার দেনা করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেও তার ডান পা ভাল করা যায়নি।
সে থেকে তার বাবার দেয়া অভিশাপের বোঝা মাথায় নিয়ে স্টেচের উপর হাতে ভর দিয়ে বিগত ৮ বছর ধরে এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা ও মানুষের সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
জানাগেছে, কচুয়া উপজেলার সফিবাদ পূর্ব পাড়া মোল্লা বাড়ির অধিবাসী মোঃ আব্দুল মালেক মোল্লার ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে ছিল। সন্তানদের মধ্যে আলী হোসেন ছিল ২য়।
ওই সময়ে তাদের পরিবারে সংসারে হাল ধরার তেমন কেউ না থাকায় আলী হোসেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ না করে কর্মে প্রবেশ করে সংসারের হাল ধরেন।
আলী হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘প্রায় ২ বছর আগে তার বাবা আব্দুল মালেক মারা গেছেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তার বাবা আব্দুল মালেক ছেলে আলী হোসেনের উন্নত চিকিৎসার জন্য সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে অনেক চেষ্টা করেন।’
ডান পা হারানো মোঃ আলী হোসেন জানান, বর্তমানে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে তার অসহায় সংসার। ছেলেরা উপযুক্ত না হওয়ায় অভাবী সংসারের হাল তাকেই ধরতে হয়। ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়েরা স্বামীর সংসারে বেশ সুখে-শান্তিতে রয়েছে। কিন্তু ছোট মেয়ে পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজে বিএ অধ্যয়নরত রয়েছে। টাকার জন্য মেয়েকে ভাল পাত্রস্থ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘আমি বাবার সাথে যে অন্যায় করেছি, তার ক্ষমা নেই। বাবা মারা গেছে দু’বছর আগে। বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় তার পা ধরে অনেক কেঁদেছি। বাবা বলেছে “আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু তোর আল্লাহ তোকে ক্ষমা করেন নাই। তোকে আরো ভিক্ষা করতে হবে। (১২ বছর)”
আলী জানান, ‘অনেক বয়স হয়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন আর ভিক্ষা করতে ভালো লাগে না। হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। বাবাকে লাথি দেওয়া যেমন অন্যায় তার চাইতে বড় অন্যায় ভিক্ষা করা। আমি আর ভিক্ষা করতে চাই না। কিন্তু কি করবো বিধির বিধান মেনে চলতেই হবে। ভিক্ষা করি বিদায় আত্মীয় স্বজন আমার খোঁজ খবর নেয় না এবং অনেকেই ঠিক মতো কথা বলতে চায় না।’
‘তবে আমার মতো কোন ভাই যাতে তাদের বাবা-মাকে কষ্ট না দেয় এটাই আমার আকুতি। একটি পঙ্গু কিংবা বয়স্ক ভাতা পেলে আর ভিক্ষা করবো না।’
প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক ভাতা পেতে ইউপি চেয়ারম্যানর সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন আলী হোসেন।
ব্যক্তিকে খাটো করার উদ্দেশ্যে নয়, সামাজিক শিক্ষা মনে করে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে : সম্পাদক
প্রতিবেদক- জিসান আহমেদ নান্নু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কচুয়া)
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১: ১৩ এএম, ১০ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ