দেশে জনশুমারির কাজ শুরু হয় ১৫ জুন, যা ২১ জুন (মঙ্গলবার) মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ ১৬ জুন সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়। এতে পুরো সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলা সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী— সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনায় তথ্যসংগ্রহের কাজ চলে ২৮ জুন পর্যন্ত। এরপর বহুল প্রতীক্ষিত জনশুমারি ও গৃহগণনায় দেশের জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
ফলাফল অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন, যা ১০ বছর আগে ২০১১ সালের হিসাবে ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। গত এক দশকে মানুষ বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২’ এর প্রকাশিত ফলাফল আরও স্বচ্ছ ও ভুল-ত্রুটি সংশোধনে শুরু হচ্ছে শুমারি পরবর্তী যাচাই।
এ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ উপলক্ষে সোমবার (৩ অক্টোবর) বিআইডিএস সম্মেলনকক্ষে শুমারি পরবর্তী যাচাই জরিপ কার্যক্রমে নিয়োজিত তথ্যসংগ্রহকারী, সুপারভাইজার এবং সুপারভাইজিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর সারাদেশে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর শুমারি পরবর্তী যাচাই জরিপ পরিচালিত হবে।
নির্বাচিত গণনা এলাকায় ৯ অক্টোবর যারা খানায় অবস্থান করেছেন তাদের তথ্য ট্যাবলেটের মাধ্যমে বিআইডিএস নিয়োগ করা গণনাকারীরা সরাসরি সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে সংগ্রহ করবেন। আগামী ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর সারাদেশে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর শুমারি পরবর্তী যাচাই জরিপ পরিচালিত হবে। সারাদেশের মোট ৩৫৪টি নমুনা এলাকা ধরে এ গণনা যাচাই জরিপ করা হবে।
রাজধানীর আগরগাঁও এ বিআইডিএসের সন্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। গেস্ট অব অনার ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। এছাড়া বক্তব্য দেন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন, পিইসি কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ড.ইউনূস।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়— যাচাই জরিপ ট্যাবের মাধ্যমে কম্পিউটার অ্যাসিসটেড পারসোনাল ইন্টারভিউং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে করা হবে। ৯ অক্টোবর রাত ১২ টা ১ মিনিটে নির্ধিারিত এলাকার অবস্থান করা সব দেশি-বিদেশি নাগরিককে গণনার আওতায় আনা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কম সময়ের জন্য সাময়িকভাবে বিদেশে অবস্থান করা নিদিষ্ট এলাকার সব বাংলাদেশি নাগরিককে পুনরায় গণনা করা হবে। এর পর নতুন তথ্যের সঙ্গে আগে পাওয়া শুমারির তথ্য মিলিয়ে দেখে বলা যাবে শুমারিতে কতটা ভুল-ক্রুটি হয়েছে। তারপর তথ্য সমন্বয় করে জনশুমারির মূল প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
এমএ মান্নান বলেন, আমাদের বিবিএস ভালো কাজ করছে। বিবিএসের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ। আমরা সঠিক তথ্য সবসময় প্রকাশ করি। তারপরও কিছু মানুষের বিবিএসের তথ্য শুনতে গায়ে জ্বালা করে। কারণ বিবিএস মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির তথ্য দেয়। এসব তথ্য যারা সহ্য করতে পারেন না তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আমরা তথ্যেও কেন ইঞ্জিনিয়ারিং করবো না। শুধু প্রক্রিয়াগত কারণে একটি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
২০১১ সালে পরিচালিত আদমশুমারি, ২০১৩ সালে পরিচালিত অর্থনৈতিক শুমারি এবং ২০১৫ সালে পরিচালিত বাংলাদেশ অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারির পিইসি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) কর্তৃক সম্পাদিত হয়, যাতে তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে বিবিএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও বিআইডিএসের মাধ্যমে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর পিইসি সম্পাদিত হচ্ছে। তবে, এবারই প্রথম পিইসির গণনাকারী ও সুপারভাইজার বিআইডিএস কর্তৃক সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে শিক্ষিত, স্মার্টফোন পরিচালনায় পারদর্শী, শুমারি/জরিপ কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুরুষ ও নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, পিইসি থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর ফলাফল চূড়ান্ত করা হবে।
অক্টোবর ৩, ২০২২
এজি