চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ফরিদগঞ্জ সদরের ব্র্যাক(চতুরা) অফিসের উত্তর পাশ দিয়ে পূর্বদিকে চলে যাওয়া ব্যস্ততম রাস্তাটি মিলিত হয়েছে রুপসা উত্তর ইউনিয়নের পাকা সড়কে।
ফরিদগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত রাস্তা স্বাধীনতার ৪৬ বছরে একবারের জন্য হলেও চেহারা বদল হয়নি। বিগত ১০ বছর ধরে এ কাঁচা রাস্তাটি পাকা করনের দাবি তুলে আসছে ভুক্তভোগী জনগণ।
উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজার হাজার মানুষ এবং শত শত যানবাহন।
এ রাস্তাটির উপর নির্ভরশীল বড়ালী, গাব্দেরগাঁও, বদরপুর, বদিউজ্জামালপুর এবং রুস্তমপুরের মানুষ। দূর গ্রামের লোকজন উপজেলা সদরে আসতে সময় বাঁচানোর জন্য অপরিহার্য এ রাস্তাটি ব্যবহার করছে। অথচ নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। সময়ের দাবি এবং ফরিদগঞ্জ পৌরসভার বিগত মেয়রর প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি গেল কিন্তু তার আমলে আর আলোর মুখ দেখেনি সড়কটি। বর্তমান মেয়রেরও এক বছর বিদায় হয়েছে গত জানুয়ারি মাসে। তিনিও এলাকার মানুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অতিদ্রুত রাস্তাটি করে দিবেন।
সাবেক এমপি এবং বর্তমান এমপির কাছেও আবেদন ছিলো রাস্তাটি নিয়ে। কিন্তু বিধিবাম! কেউই কথা রাখেননি। রাস্তাটি থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় দেড় কি.মি.। এত কাছাকছি হওয়া সত্ত্বে প্রশাসনের কাছে রাস্তাটির গুরুত্ব নেই।
খরা এবং বর্ষা, দুই কালই রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। গরমে এত বেশি বালু জমে যে পথচারীকে রাস্তা ছেড়ে পাশের কৃষি জমি দিয়ে হাটতে দেখা যায়।
একটি গাড়ি গেলে দেখা যায় পথচারির চেহারা বালুতে সাদা হয়ে যায়। বর্ষা কালের চিত্র আরো ভয়াবহ। কবি যদি তখন এ এলাকাতে থাকতেন তা হলে “হাঁটু জল থাকে” এর পরিবর্তে লেখতেন ‘হাঁটু কাদা থাকে’। বর্ষা কালে রাস্তাটি দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটা রাস্তা নাকি চারা রোপনের জন্য প্রস্তুতকৃত ধানী জমি। বর্ষাকালে এত পরিমান কাদা থাকে যে, গাড়ি চলাতো দূরের কথা পায়ে হেটে চলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ সময়ে এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
বড়ালী-গাব্দের গাঁও মিলে ‘বাঁশতলা’ এবং গাব্দের গাঁও-বদরপুর মিলে ‘ভোট স্কুল’ এলাকার ছোট- খাটো দু’টি বাজার। এখানকার ব্যবসায়ীরা ফরিদগঞ্জ সদর, রুপসা বাজার, গৃদকালিন্দিয়া এবং রায়পুর থেকে দোকানের জন্য মোকাম করে। বর্ষাকালে তাদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। দ্বিগুন ভাড়া দিয়েও কোন যানবাহন পাওয়া যায়না। এতে তারা অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
বড়ালী, গাব্দেরগাঁও এবং বদরপুর গ্রামের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন রয়েছেন যারা ফরিদগঞ্জ বাজারে ব্যবসা-বানিজ্যের সাথে জড়িত দীর্ঘদিন। বাণিজ্য শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন এ রাস্তার মুখোমুখি হন, তখন কষ্টের শেষ থাকে না। গভীর রাতে এ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তাদের বাড়ি ফিরতে হয়।
বড়ালী-গাব্দের গাঁও এর মিলনস্থল পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তে এজি ক্যাডেট কিন্ডার গার্টেন নামে কোমল-মতি শিশুদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে উদ্যেগের মধ্যে থাকে প্রায় শত অভিভাবক। ছোট্ট শিশুদেরকেও এ কাদামাটি অতিক্রম করে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। অনেক ছাত্র-ছাত্রী কাদার ভয়ে বর্ষাকালে স্কুল যেতে চায় না।
এছাড়া গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা-হাসমত অনার্স কলেজ, চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চাঁদপুর মহিলা কলেজ, চাঁদপুর আল আমিন কলেজ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ, ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল হাই স্কুল, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা, কাছিয়াড়া মহিলা আলিম মাদ্রাসা, আদর্শ একাডেমি ফরিদগঞ্জ, ব্র্যাক স্কুল, মাতৃছায়া কিন্ডার গার্টেন এবং বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতশত ছাত্র-ছাত্রী এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে।
এলাকায় বেশ কয়েকটি নার্সরি রয়েছে। রয়েছে একাধিক ফিশারী এবং হ্যাচারি। এ জন্য প্রতিদিনই পিকআপ, ট্রলিসহ পাওয়ার ট্রলি যাতায়াত করে। জনবহুল এলাকা হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে শতাধিক যানবাহন চলাচল করে।
রাস্তাটি পাকা হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তৎকালিন সাংসদ ও মেয়রের দ্বন্দ্বে তা আলোর মুখ দেখেনি।
চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে সংযোগ সড়কটির কাজ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পৌরসভার অংশ বলে প্রায় সিকি কিলোমিটার রাস্তা বাদ দিয়ে অর্থাৎ পৌরসভার অংশ বাদ দিয়ে ১৫নং রুপসা উত্তর ইউনিয়নের সীমানা থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়। বাদ পড়ে যায় পৌরসভার অংশের রাস্তাটি।
২০১৩ সালে রাস্তাটি নিয়ে এ প্রতিবেদক তখনকার মেয়রের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রথমে সাবেক এমপি মহোদয়ের উপর কিছুক্ষণ অভিযোগের সুরে বক্তব্য রাখলেন। তারপর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২ মাসের মধ্যে রাস্তাটি করে দিবেন। জনগনের আশা ফুরিয়ে যায় কিন্তু মেয়রের প্রতিশ্রুতির সেই দুই মাস ফুরায়না। একসময় মেয়রেরও আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যায় কিন্তু ফুরায়নি এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন।
মেয়র বদল হয়েছে কিন্তু বদল হয়নি রাস্তাটির ভাগ্যের। তারপরও পথচারীরা এখনও স্বপ্ন দেখে তাদের নতুন পৌর পিতা, পিতার মতই আচরন করবে। করবেন সুষম উন্নয়ন। হাজারো পথচারীর এ রাস্তাটির প্রতি সুনজর দিবেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুপসা উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গাব্দের গাঁও গ্রামের বিদ্যুৎ লাইন উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান সাংসদ ড.মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া।
ওই অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীর পক্ষে উক্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল এমপি মহোদয়ের কাছে আবেদন করেন রাস্তাটি পাকা করে দেওয়ার জন্য। দীর্ঘ সময় পার হলেও এলাকাবাসী কোনো আশার আলো দেখতে পায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘রাস্তাটি পৌরসভার বলে কয়েকজন প্রশ্ন তুললেও এমপি সাহেব রাস্তাটি নিয়ে প্রচন্ড আগ্রহী। “যার রাস্তাই হোক রাস্তাতো করতে হবে” বলে তিনি আমাকে কোড দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কোনো সমস্যা নেই, উঁনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একটি কোড দিয়ে রাস্তাটি করে দিবেন।’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কমিশনার আব্দুল মান্নান পরান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘এ ওয়ার্ডের দু’টি রাস্তা ছাড়া বাকি সব রাস্তা হয়ে গেছে। এ রাস্তাটিও আমরা প্রকল্প আকারে পাঠিয়েছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে।’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও প্যানেল মেয়র খতেজা বেগম (আলেয়া) চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘রাস্তাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি ব্যস্ততম সড়ক। অথচ রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। এক বর্ষাকালে আমি নিজের টাকা খরচ করে এক ট্রাক মাটি পালাইছি। বর্ষাকালে মানুষদের অনেক কষ্ট করে রাস্তা পার হতে হয়। সড়কটি নিয়ে আমি পরিষদে একাধিকবার কথা বলেছি।’
রাস্তাটি নিয়ে মেয়র মো.মাহফুজুল হক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘রাস্তাটি প্রক্রিয়াদিন আছে। হয়ে যাবে।’
এসব প্রতিশ্রুতিতে এলাকাবাসীর কেউ আশা হত হয়, কেউ আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখে। তবে প্রতিবছর বর্ষার আগে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে মাটি, বালি আর সুরকি ফেলে রাস্তাটিকে চলার উপযোগী করার চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
:আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০১: ১৭ পিএম, ২৩ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ