ফরিদগঞ্জে তিন সন্তানের জনকের রহস্যজনক মৃত্যু

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আগের দিনে থানায় জিডি পরের দিন রহস্যজনক মৃত্যু।

১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ফরিদগঞ্জ দক্ষিন ইউনিয়নের পূর্ব পোয়া নোয়া বাড়ির মৃত মোখলেছুর রহমানের মেজো ছেলে বাবুল মিয়া (৪৫) তিন সন্তানের জনকের রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পারিবারিক কলহের বলি হলেন বাবুল মিয়া। সবার দাবী সে মস্তিষ্ক বিক্রিত লোক। তার খেয়াল খুশি মতো সে আত্মহত্যা করেছে।

ঘটনার বিশ্লেশন বলে ভিন্ন কথা। মস্তিষ্ক বিক্রিত লোক কিভাবে নিজে থানায় এসে অভিযোগ করে? বাড়ির লোকজন এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদেরও অভিন্ন মত মৃত বাবুল মিয়া দোষি। কি কারণে আত্মহত্যা করেছে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে সবার একটিই কথা সে পাগল ছিলো।

মরহুম বাবুল মিয়া তার স্ত্রী বেবী আক্তারকে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক আছে; এমন সন্দেহ হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝড়গা-ঝাটি হতো। মৃত্যুর আগের দিন রাতেও একই ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবুল মিয়া ওহিদ মাস্টার এবং ওয়ালী উল্লাহ কারীকে গালাগাল দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ওহিদ মাস্টারের ছেলে শিখা (৩৫) ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুলকে মারতে আসে।

ঘটনাস্থলে তাকে না পেয়ে শিখা বাবুলের স্ত্রী এবং দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে রিমিকে মারতে থাকে। ‘আমার স্ত্রীকে আমি মারবো, আবার আমিই আদর করবো; তাদের কী? তারা কেন আমার মেয়ে, স্ত্রীকে মারলো।’

বাবুল মিয়াকে এ বলে আক্ষেপ করতে দেখে বলে জানান বাড়ির লোকজন। পরদিন সকালে সকলের অগোছরে সে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

বাবুল মিয়া (৪৫) একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। বাড়ির লোকজন এবং পরিবারের দাবী বিগত তিন বছর ধরে সে মানসিক রোগে ভোগছেন। তিনি ২ মেয়ে ও ১ পুত্র সন্তানের জনক।

ঘটনার দিন ঘরে বাবুল মিয়ার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে আড়ার সাথে তার ঝুলন্ত মৃত দেহ দেখতে পায় বড় মেয়ে রিমা আক্তার। সে তার বাবার লাশটি ছোট বোনের সহায়তায় মাটিতে নামায়। এসময় তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেন।

বাবুল মিয়ার স্ত্রী বেবী আক্তার বলেন,‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন লোক ছিলেন। প্রায় সময় সে আমাকে মারধর করতো। পারিবারিক কলহের কারণে সে আত্মহত্যা করে।’

অভিযুক্ত ওহিদ মাস্টার, তার ছেলে শিখা এবং ওয়ালী উল্লাহ কারী ঘরে থাকলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো মোস্তফা কামাল জানান,‘ঐ বাড়ির শিখা (৩৫) বাবুল মিয়ার স্ত্রী এবং মেয়েকে মারধর করেছে। এ আলোকে সে থানায় একটি জিডি করতে যায়। এটাকে কেন্দ্র করে সে আত্মহত্যা করে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থানে এসে এ তথ্য জানতে পেরেছি। সে বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর কাছে জানতে পারি বাবুল স্টক করেছে। কিন্তু পুলিশ ভিন্ন কিছু দেখে মরদেহ থানায় নিয়ে যায়।’

এস আই কুদ্দুস বলেন,‘আমরা সংবাদ পেয়ে লাশ থানায় নিয়ে আসি। সেখানে তার স্ত্রীর কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পাই। সেখানে লেখা ছিলো, তার প্রাণ নাশের হুমকী এবং তার স্ত্রী, মেয়েকে মারার ঘটনা উল্লেখ রয়েছে। তবে অভিযোগটি থানায় জমা দেওয়া হয়নি।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন জানান,‘মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন.‘মরহুম বাবুল মিয়া পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।’

প্রতিবেদকঃ শিমুল হাছান

Share