জঙ্গি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে বিশ্বের সব মানুষ, সব সমাজকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আর এই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
তিন দিনের সফর শেষে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন- যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।
সন্ত্রাসের পথে তরুণরা যেভাবে এগুচ্ছে, সেটা ধংসাত্মক। তা থামাতে হবে এখনই। আমরা বিশ্বাস করি দেশি জঙ্গিদের সাথে বিদেশি জঙ্গিদের অবশ্যই যোগাযোগ হয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে বিশ্বের সব মানুষ আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে এই যোগাযোগ হচ্ছে সেই উপায়গুলো খুঁজে বের করার এবং বন্ধ করার।
তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নিশা বলেন, বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
নিশা দেশাই বিসওয়ালের এবারের ঢাকা সফর গুলশান ট্র্যাজেডির প্রেক্ষাপটে। তিনদিনের সফরে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে। নিশার বিশ্বাস স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর। চ্যানেল ২৪ এর কাছে তুলে ধরলেন কিভাবে আগামীদিনে দু’দেশ সন্ত্রাস দমনে একসাথে কাজ করতে পারে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দু’দেশের মাঝে যত তথ্য আছে সেগুলো একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে বিস্তারিত জানবার। সেজন্য দরকার যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্বিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করার। আর তাই বাংলাদেশ যেভাবে চাইবে তার পাশাপাশি সার্বিকভাবে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।’
মার্কিন এই সহকারি মন্ত্রীর মতে, গুলশানে হামলাকারী বিপথগামী তরুণরা কখনই মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল আরও বলেন, ‘গুলশানের হামলাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের হামলা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি আর অবাক হচ্ছি কিভাবে তরুণরা মিথ্যা ও ভুল আদর্শে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি বিশ্বজুড়ে কেন এমন হচ্ছে? কারণ এমন ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠা কখনই মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমনকি কিভাবে কোন নেশায় তরুণেরা এমন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে নিজেদের সেটাই আমরা জানার চেষ্টা করছি। কারণ তারা যে আগামীর দিকে এগুচ্ছে সেটা ধংসাত্মক। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার সময় বিষয়টি উঠে এসেছে। সন্ত্রাস দমনে তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহবান জানালেন নিশা দেশাই। মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক, আইএফসির তথ্য মতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অসীম। আমাদেরও বিশ্বাস এমন, কারণ আমাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। আগামীদিনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২০৩০ সালের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি হয়ে দাঁড়াবেই। আর তাই এদেশ বিশ্বের বণিকদের নজর কেড়েছে। আমি কথা বলেছি ব্যবসায়িক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে। তারা অবশ্যই উদ্বিগ্ন কিন্তু এদেশে নিজেদের ব্যবসা প্রসার ঘটাতে পিছু হটবেন না।’
নিশা মনে করেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে বড় উপায় হচ্ছে তাদের আদর্শ মুছে ফেলা। সেলক্ষ্যে বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে আগামীদিনে কাজ করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলা এর ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তবে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধাকে ধরে রাখতে সক্ষম হবে। সেই সাথে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
জিএসপি প্রসঙ্গে নিশা দেশাই বলেন, আমরা মনে করি জিএসপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মৌলিক অগ্রগতি হয়েছে। তবে রানা ট্রাজেডির পর এখনও অনেক বিষয়ে অগ্রগ্রতি দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষত শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে টেকসই অগ্রগতি দেখিয়ে জিএসপি লাভ করবে বলে আশা করেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা প্রসঙ্গে সুশীল সমাজ, সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, সন্ত্রাসের পথে তরুণরা যেভাবে এগুচ্ছে তা ধ্বংসাত্মক। এখনই তা থামানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে গত ১লা জুলাইয়ের হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে আইএস। এছাড়া অন্যান্য বড় হামলার ঘটনায় আল কায়েদা দায় স্বীকার করেছে।
‘আমরা বিশ্বাস করি দেশি জঙ্গিদের সাথে বিদেশি জঙ্গিদের অবশ্যই যোগাযোগ হয়। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে এই যোগাযোগ হচ্ছে সেই উপায়গুলো খুঁজে বের করার এবং বন্ধ করার। আর সেজন্য আমরা চাই আমাদের দু’দেশের মাঝে যত তথ্য আছে সেগুলো একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে বিস্তারিত জানবার। সেজন্য দরকার যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্বিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করার। আর তাই বাংলাদেশ যেভাবে চাইবে তার পাশাপাশি সার্বিকভাবে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সচেতনতা তৈরি হোক। কারণ আমরা দেখেছি স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষিত তরুণরা কোন না কোনভাবে চরমপন্থী নেটওয়ার্কের মিথ্যা আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিতে প্রভাবিত হচ্ছে। তরুণদের এ পথ থেকে ফেরানো আমাদের দায়িত্ব।
Video -1
Video -2