Home / সারাদেশ / জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পরিচিতি
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পরিচিতি

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পরিচিতি

জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ শব্দদ্বয় ইংরেজি militant, militancy শব্দদ্বয়ের অনুবাদ। ইদানিং এগুলো আমাদের মধ্যে অতি পরিচিত ও অতি ব্যাবহৃত শব্দ। যদিও শব্দগুলি কিছুদিন আগেও এতো প্রচলিত ছিলো না।

আর আভিধানিক বা ব্যবহারিকভাবে শব্দগুলো নিন্দনীয় বা খারাপ অর্থেও ব্যবহৃত হতো না। শাব্দিক বা রূপকভাবে যোদ্বা, সৈনিক বা যুদ্বে ব্যবহৃত বস্তু বুঝাতে এ শব্দগুলো ব্যবহৃত হতো।

বৃটিশ ইন্ডিয়ার কমান্ডার ইন চিফকে “জঙ্গিলাট” বলা হতো শক্তিমান বা উগ্র বুঝাতেও এ শব্দ ব্যবহার করা হয়।

অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা হয়েছে ‘militant. Adjourning the use of force or strong pressure to achieve one’s aim. … militant: n. militant person, esp. in Politics.

“মিলিট্যান্ট (জঙ্গি) : যে ব্যক্তি তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শক্তি বা জোরালো প্রভাব ব্যবহার করা সমর্থন করে…। Merriam-Webster’s Collegiate Dictionary- তে বলা হয়েছে: militant 01: engaged in warfare or combat : fighting.

02: aggressively active (as in a cause). অর্থাৎ: মিলিট্যান্ট (জঙ্গি): যুদ্ব বা সম্মুখসমরে লিপ্ত ব্যক্তি,যুদ্বরত। উগ্রভাবে সকৃয়। ”
দ্বিতীয় অর্থটিকে আরো একটু ব্যাখ্যা করে মাইক্রসফ এনকার্টা অভিধানে মিলিট্যান্ট বা জঙ্গি শব্দের অর্থে বলা হয়েছে: (aggressive: extremely active in the defense or support, of a cause, often to the Point of extremism): “আগ্রসী কোনো বিষয়ের পক্ষে বা সমর্থনে চরম ভাবে সকৃয়, যা প্রায়শ চরমপন্হা পর্যন্ত পৌঁছায়।”

এ সকল অর্থ কোনটিই সরাসরি বে-আইনি অপরাধ বুঝায় না। এসকল অর্থে আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক, আদর্শিক, পেশাজীবি ও সামাজিক দলই “মিলিট্যান্ট” বা জঙ্গি। কারন সকলেই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শক্তি বা’প্রেসার’ প্রয়োগ পছন্দ করেন এবং সকলেই তাদের নিজেদের আদর্শ স্বার্থ রক্ষায় বা প্রতিষ্ঠায়

উগ্রভাবে সক্রিয়-
কিন্তু আমরা বর্তমানে ‘জঙ্গি’ বলতে বুঝি ব-আইনি সিংসতা ও খুনখারাপি। এ অর্থে প্রসিদ্ব ও সুপরিচিতি পরিভাষা সনএাস (terrorism)। কিন্তু আমরা বাংলায় পত্র -পত্রিকা, বক্তৃতা বিবৃতি ও লেখালেখি থেকে বুঝি যে,   সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরম পন্হার মাধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

যারা সাম্যবাদ,  সমাজতন্ত্র বা সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার নামে উগ্রতা,  অস্ত্রধারণ , সহিংসতা বা খুন-খারাবিতে লিপ্ত হন তাদেরকে আমরা “চরমপন্হী”(extremist) বলি।

আর যারা ইসলামের নামে বা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠর নামে উগ্রতা , অস্ত্র ধারণ, সহিংসতা বা খুন-খারাবিতে লিপ্ত তাদেরকে আমরা বলি ‘জঙ্গি’।

আর যারা প্রচলিত সাধারণ রাজনৈতিক দলের নামে বা কোনো দল, মতবাদ বা আদর্শের নাম না নিয়ে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্বারের জন্য যে উগ্রতা, অস্রধারনণ সহিংসতা বা খুন-খারাবিতে লিপ্ত হয় তাদেরকে সন্ত্রাসী বলি।

এরূপ বিভাজন বা পার্থেকের কোনো ভাষাগত বা তথ্যগত ভিওি আছে বলে জানা যায় না। বরং ইংরেজি ব্যবহার থেকে বুঝা যায় যে, militant/militancy জঙ্গি বা জঙ্গিবাদ শব্দ সরাসরি ‘বে-আইনী কর্ম’ বাঅপরাধ বুঝায়না।

বরং বেআইনি বা আইন-সম্নত যে কোনো প্রকারের উগ্রতা বুঝাতে (militant, militancy):জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হয়। চরমপন্হা ওচরমপন্হী(extremism/extremist)শব্দয়ও সরাসরি অপরাধ বা বেআইনি কর্মকাণ্ড বুঝায়না।

পক্ষান্তরে সন্ত্রাস (terrorism)শব্দটিই সরাসরি অপরাধ ও বেআইনি কর্মকাণ্ড বুঝায়।

সবশেষে বলা যায়, জঙ্গি, সন্ত্রাস, চরমপন্থা শব্দগুলো সমার্থবোধক। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শ্রেণি-গোষ্ঠি বিবেচনা করা এর ব্যবহার করা হয়। এ যেমন ইসলামি পোষাক পরে কেউ সন্ত্রাসী করলে তাকে বলা হয় জঙ্গি। অন্য পোষাকে চরমপন্থা বা সমাজে হত্যা, ধর্ষণ রাহাজানি সৃষ্টি করলে তাকে বলা হয় সন্ত্রাস।

অথচ এদের কাজ এক, কিন্তু চিহ্নিত করা হয় ভিন্ন শব্দ দিয়ে। সুতরাং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কাজের ধরণ যেহেতু একইরকম গোষ্ঠি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে একই নামে।

লেখক- মাও. শামছুদ্দীন মাহমুদ : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:০০ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Leave a Reply