বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে হামলার ঘটনায় জড়িত দুই জঙ্গি ভারতের ইসলামবিষয়ক বক্তা জাকির নায়েকের অনুসারী ছিলেন। এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের উত্তর প্রদেশের মুসলিম নেতারা এই ইসলামী বক্তা ও গবেষককে আটকের দাবি জানিয়েছেন।
ভারতের পুলিশ জাকির নায়েক এবং তার পিস টিভির ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। তার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। জাকির নায়েকের ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে জাকির নায়েক ও পিস টিভি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন মুসলিম নেতারা।
উত্তর প্রদেশের বারেলি অঞ্চলের ইমাম মাওলানা শাহাবুদ্দিন রেজভি বলেছেন, ঢাকার হামলায় জড়িত জঙ্গিরা জাকির নায়েকের অনুসারী ছিলেন। তার বক্তব্য সন্ত্রাসীদের উগ্র হতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় গুলশানে হামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জাকির নায়েক।
শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে চার মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে গুলশান হামলা এবং তাকে ঘিরে ভারতজুড়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি দাবি করে সে মানুষ হত্যা করে ইসলামের পথে রয়েছে, সেটা একদমই কোরআনের পরিপন্থী কথা।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বৃহস্পতিবার জাকির নায়েকের বক্তব্য তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু গত বুধবার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের অনুরোধ পেলে জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান এমনকি তাকেও নিষিদ্ধ করার কথা ভাবতে পারে ভারত।
গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলাকারী পাঁচ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম রোহান ইমতিয়াজ এবং নিবরাস ইসলাম দুই বছর ধরে টুইটারে জাকির নায়েককে অনুসরণ করত এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ। গত বছর জাকির নায়েকের বক্তব্য এবং পিস টিভির একটি অনুষ্ঠান ফেসবুকে পোস্ট করেছিল রোহান ইমতিয়াজ। এর পরই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এদিকে বিতর্কের মুখে সৌদি আরবের মক্কায় সফররত জাকির নায়েক জানিয়েছেন, আগামী ১১ জুলাই দেশে ফিরে পরদিন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
গুলশান হামলায় জড়িত দুজন জাকির নায়েকের ভক্ত এমন খবরের বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির নায়েক বলেন, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএস) নামটিই ইসলামবিরোধী। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামটি ব্যবহার করে আমরা আসলে ইসলামের নিন্দা করছি।
আইএসকে এন্টি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া নামে অভিহিত করে আইএস নামটি ইসলামের শত্রুদের দেওয়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গুলশান হামলায় জড়িতরা জাকির নায়েককে অনুসরণ করে এমন তথ্য মিথ্যা দাবি করে জাকির নায়েক বলেন, আমার ফেসবুক ফলোয়ারের বড় অংশই বাংলাদেশি। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের মানুষই বাংলায় প্রচারিত পিসটিভিতে আমাকে দেখেন।
৯০ শতাংশ বাংলাদেশি আমাকে চেনেন। প্রবীণ রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষকরা রয়েছেন সেই তালিকায়। আর এই বিপুল মানুষের ৫০ শতাংশ আমার গুণমুগ্ধ। এই অবস্থায় জঙ্গিরা যদি আমায় চেনে তাহলে কি আমার খুব বেশি অবাক হওয়ার কথা?
হত্যাকারীরা আমার বক্তব্যের সঙ্গে পরিচিত হতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমি তাদের অনুপ্রাণিত করেছি। আমি সাধারণত ধর্মীয় বই অনুসারে বক্তব্য দেই। আমার বক্তব্য শুনে তারা যদি সঠিক ইসলামকে বুঝতে না পারে সেটা তাদের দুর্ভাগ্য।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:০০ এএম, ১০ জুলাই ২০১৬, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur