আন্তর্জাতিক

‘ছেলে মরে যাক, অন্তত জান্নাতে খাবার পাবে’

‘হে আল্লাহ আমার ছেলেকে তুমি নিয়ে যাও, জান্নাতে অন্তত সে খাবার পাবে’। আহত ছেলের নিদারুণ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক মা স্রষ্টার কাছে এমন প্রার্থনায় করেছেন। শুধু ওই মা-ই নয়, সিরিয়ার পূর্ব ঘৌতায় হাজার হাজার শিশুর মা তাঁর সন্তানের মৃত্যু কামনা করে চলছেন। সন্তানের নিদারুণ যন্ত্রণা সইবার ক্ষমতা কোন বাবা-মায়ের হয় না। আর সেই সন্তানের কফিন বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণা তো আরও ভয়ানক। তবে সেই ভয়নাক কাজটি করতে

একের পর এক রাসায়নিক অস্ত্রের হামলায় পৃথিবীতেই যেন দোযক নেমে এসেছে। সিরিয়ার পূর্ব ঘৌতায় আসাদ বাহিনীর রকেট ও বিমান হামলায় কোন কোন জায়গায় ৯৩ শতাংশ ভবন ধসে গেছে। এতে শতশত শিশু মৃত্যুর কোলে দাঁড়িয়ে আছে। এমনই এক শিশুর মা আহত ছেলের মৃত্যু কামনা করে আহাজারি করতে থাকেন। ছেলের অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মায়ের আরজ, ‘হে আল্লাহ আমার ছেলেকে তুমি নিয়ে যাও, জান্নাতে অন্তত সে খাবার পাবে।’

বিবিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক মা তার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসকের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শিশুটির মা। ওইদিকে চরমাহত শিশুটি কাতরাতে কাতরাতে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো। একদিকে অক্সিজেন সংকট অন্যদিকে স্প্রিন্টারে আঘাত। সব মিলিয়ে যেন মৃত্যুদূত তাকে ডাকছে। মায়ের চোখের সামনে ছেলের এ যন্ত্রণা কিছুতেই সহ্য হওয়ার নয়। ওই মা তখন বলেন, ‘এর চেয়ে মৃত্যু ভাল, জান্নাতে অন্তত সে খাবার পাবে।’ ওই সময় চিকিৎসকও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ওষুধ সংকটের কারণে এ ধরণের বেশ কয়েকজন শিশুকে বাঁচাতে পারছেন না ওই চিকিৎসক।

সিরিয়ায় চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। আর পূর্ব ঘৌতার নিকটবর্তী একটি শহরের ৯৩ শতাংশ ভবন-ই আসাদ বাহিনী রকেট হামলা চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এ ছাড়া অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর দূয়ারে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক শতাধিক শিশু। সেখানে নেই কোন ওষুধ, নেই কোন খাবার, নেই কোন জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম।

আসাদ বাহিনীর কবল থেকে কেবল ভবনগুলো-ই নয়, হামলার হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না মসজিদ, মন্দির ও হাসপাতালগুলো। তাই আহত হওয়ার পর হাসপাতালে যেতেও সাহস পাচ্ছে না সিরীয় নিরীহ মানুষেরা। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিদিন দেশটিতে ৫ ঘণ্টা করে হামলা বন্ধের নির্দেশ দিলেও আসাদ বাহিনী ও রুশ বাহিনীর সদস্যরা তা মানছে না। তাদের হামলায় প্রতিদিনই নতুন নতুন বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। এ যেন সাজানো ফুলে ভরা সুউচ্চ ভবনগুলো একে একে ধ্বসে পড়ছে। মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। আর সেই ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ছে অসহায় মানুষগুলো।

এদিকে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিকে পৃথিবীর নরক বলে ঘোষণা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস। সিরিয়ার পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, পূর্ব গৌতার নিকটর্তী একটি জেলায় অন্তত ৯৩ শতাংশ ভবন-ই ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্যাটেলাইটের চিত্র বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
(বিবিসি)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:১৫ পি.এম ২ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার
এএস.

Share