Home / বিশেষ সংবাদ / ছেলে থাকে টিনের ঘরে, বাবা বাঁশের মাচায়
ছেলে থাকে টিনের ঘরে, বাবা বাঁশের মাচায়

ছেলে থাকে টিনের ঘরে, বাবা বাঁশের মাচায়

বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এক বাবার স্থান হয়েছে বাঁশবাগানের নিচে মাচার উপর ঝুপড়ি ঘরে। আর বৃদ্ধ ওই পিতাকে ঝুপড়ি ঘরে রেখে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একমাত্র ছেলেটি থাকছে টিনের ঘরে।

সন্তান জন্মের পর প্রতিটি পরিবারে লোকজন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে থাকে। সন্তান একদিন বড় হবে। বাবা-মায়ের সেবা করবে। দায়িত্ব নেবে বাবা-মায়ের। এমন নানান স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকে অনেকে। এটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থার প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বাবা-মা কখনো প্রতিদানের জন্য সন্তানদের জন্য কিছু করে না। ববং সন্তানরা যেন সুখী হয়। কোন কষ্টের ছোয়া যেন না লাগে এই চিন্তায় নি:স্বার্থ ভাবে সন্তানের মঙ্গলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেন। । অথচ যে বাবা এতো কষ্ট করে সন্তানকে বড় করে। নিজে অভূক্ত থেকে ছেলেকে খাওয়ায়। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া বয়সে সেই বাবার স্থান হয়েছে বাঁশবাগানের নীচে বাঁশের মাচার উপর ঝুপড়ি ঘরে। আর বৃদ্ধ পিতাকে ঝুপড়ি ঘরে রেখে স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিজেরা থাকছেন টিনের ঘরে।

ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের রাজীবপুর গ্রামে। ক্ষোভে দুঃখে হতভাগা বাবা গাঠি মোহাম্মদ কাঁদলেও কাদছে না একমাত্র সন্তান মহির উদ্দিন।

জানা গেছে, ৯০বছরের বৃদ্ধ রাজীবপুর গ্রামের গাঠি মোহাম্মদের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে মহির উদ্দিনের কাছে থাকতো। কিন্তু স্ত্রী মৃত্যুর পর পৃথিবীটা রঙ্গিন হতে থাকে গাঠি মোহাম্মদের কাছে। শ্বশুরকে বাড়ী ছাড়া করার জন্য শুরু হয় ছেলের বৌয়ের নানা চক্রান্ত। এক সময় সেই চক্রান্তে যোগ দেয় একমাত্র সন্তান মহির উদ্দিন। নিরুপায় হয়ে ৬মাস আগে বাড়ীর পাশে বাঁশবাগানের পাশে একটি বাঁশের মাচায় পলেথিন আর প্লাস্টিক বস্তা দিয়ে তৈরী ঝুপড়ি ঘরে থাকতে বাধ্য হয়। অথচ বাবার ঝুপড়ির পাশে টিনের ঘরে বৌ নিয়ে মনের সুখে দিন কাটাচ্ছেন একমাত্র ছেলে।

এ ব্যাপারে গাঠি মোহাম্মদ বলেন, বাবা মৃত্যু যেন আমাকে ভূলে গেছেন। তা হলে এই বয়সেও আমার মৃত্যু হয় না। ঝুপড়ি মধ্যে এতো কষ্ট যে এখানেই পায়খানা। আর পায়খানা জমা হয় মাচার নীচে। এই বয়সে এতো কষ্টে কি জীবন চলে। ছেলে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে এতে কষ্টের ছেয়ে লজ্জাটাই বেশি। কথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলে

হতভাগা বাবার এই দুর্বস্থার কথা জানতে পেরে ছুটে যায় বীরমুক্তিযোদ্ধা কৃষিবিদ আব্দুল খালেক সরকার।

তিনি জানান, গাঠি মোহাম্মদের করুন অবস্থা এবং তার যে আকুতি আমাকে আবেগ তাড়িত করেছে। ১৯৭১সালে আমিও যুদ্ধে ছুটে গিয়েছিলাম আমাদের আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে। আমাদের সন্তানদের কথা ভেবে। এখন দেখছি যে সন্তানদের কথা আমরা ভেবে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। আজ সেই সন্তানদের বিরুদ্ধে নতুন করে সামাজিক যুদ্ধ করতে হবে। এই ঘটনাটি আমাকে লজ্বা দিয়েছে। আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। কি চেয়েছিলাম আর কি পেলাম।

এ ব্যাপারে গাঠি মোহাম্মদের ছেলে মহির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়য়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

Leave a Reply