একমুঠো ভাত চাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মা। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত মায়ের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নজরে আসে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের (ডিসি)।
সেই মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল।
এব্যাপারে আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে নির্যাতিত ওই মায়ের ছবি ফেসবুকে দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশ, প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ৭০ কি.মি. দূরে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া গ্রামে যেয়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন বৃদ্ধার যে আঘাত তার চিকিৎসা করা সেখানে সম্ভব নয়।’
“তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় ঠাঁকুরগাও সদর হাসপাতালে। বর্তমানে সেই মা ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে তার সব ধরণের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে মা তাসলেমা তার বড় ছেলের বউ-এর কাছে ভাত চাইতে গেলে, ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দিতে চান ছেলে বদরুদ্দিন।
জেলা প্রশাসক জানান, ৩০ বছর আগে তাসলেমা খাতুনের স্বামী মারা যান। তার চার ছেলে ও ১ মেয়ে থাকলেও কেউ দেখা-শোনা করে না অসহায় এই মাকে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই মা কানেও খুব একটা শুনতে পান না। চোখেও দেখতে পান না ভালো করে। এমনকি তার বাকশক্তিও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
গ্রামবাসীদের একজন নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক জানান, খাবারকে কেন্দ্র করে বউয়ের কথায় ছেলে বদরুদ্দীন বৃদ্ধা মায়ের মুখ বরাবর আঘাত করে। এতে বৃদ্ধা মায়ের বাম চোখের নিচের অংশে যখম হয়ে রক্তপাত হয়। নির্যাতন করে বাড়ির বাইরে ফেলে রাখা হয় বৃদ্ধা তাসলেমাকে।
এসময় প্রামবাসীরা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে।
পুলিশ প্রশাসন বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল আরো জানান, সেসময় বৃদ্ধা মায়ের অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে, ছেলে বদরুদ্দীনকে শাস্তির আওতায় আনার চেয়ে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা করানোটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মায়ের কষ্ট লাঘবের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই মায়ের একটি মেয়ে রয়েছে আমরা চাইবো প্রতি মাসে মায়ের জন্য এমন একটি ভাতার ব্যবস্থা করতে যাতে করে তার মেয়ে তাকে দেখা-শোনা করতে আগ্রহী হয়। আর মেয়ে যদি তাতে রাজি না হয় তাহলে মাকে রাখা হবে সরকারি শিশু পরিবারে। যেখানে মা তার নাতি-নাতনীর বয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে থাকবেন। যতোদিন বেঁচে থাকবেন এই মা ততোদিন তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে জেলা প্রশাসন।
প্রতিবেদক- কবিরুল ইসলাম কবির, হরিপুর-ঠাকুরগাঁও
: আপডেট, বাংলাদেশ ১০ : ০০ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur