খুলনা প্রতিনিধি:
‘বিজন আমারে কইছিল, বাবা দেইখো আমি সৌদি আরব যাতি পারলি অনেক টাকা আয় করতি পারব। আমাগের সংসারে আর কোনো অভাব থাকপে না। আশীর্বাদ করো আমি যেন ডাক্তারি পরীক্ষায় পাস করতি পারি। কিন্তু ছেলেডা আমার ঢাকায় যাতি পাইরল না। বোমের হাতেত্তে বাঁচতি গিয়ে মরেই গেল।’
কান্নাজড়িত কন্ঠে এমনটাই বলছিলেন ছেলে হারানোর শোকে কাতর খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পঞ্চু গ্রামের বৃদ্ধ নারায়াণ চন্দ্র গাইন (৭০)।
শনিবার রাত ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগর উপজেলার শ্মশানঘাট এলাকায় ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে কেরোসিন বোমা নিক্ষেপ করে দৃর্বৃত্তনা। এ সময় তাড়াহুঁড়ো করে নামতে গিয়ে গুরুতর আহত হন বিজন গাইন (২৩)। রোববার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বিজনের মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় পঞ্চু গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বাড়ির সবাই লাশের সৎকারে অংশ নিলেও যাননি বৃদ্ধ বাবা নারায়ণ গাইন। বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলছিলেন তিনি।
বিজন কেন ঢাকায় যাচ্ছিলেন জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসার। টাকা আয় করার জন্যি সৌদি আরব যাতি চাইল। সৌদি যাওয়ার বিষয়ডা চূড়ান্ত হওয়ার পর বিজন ডাক্তারী পরীক্ষার জন্যি ঢাকায় যাচ্ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিজন আমার অনেক কাজের ছেলে ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজমিস্তিরির কাজ কইরতো। সে ভালো প্রতিমাও বানাতি পাইরতো। এতো গুণের ছেলেডারে ভগবান আমার কাছ থেইকে কাইড়ে নিয়ে গেল!’
বিজনের প্রতিবেশী কিশোর গাইন বলেন, ‘বিজন আমাকে অনেকদিন ধরে বলতো, দাদা অভাব অনটন আর সহ্য হয় না। দেখতো বিদেশে পাঠাতে পারো কিনা। সে অনুযায়ী বিজনসহ আরও তিন জনের সৌদি আরবে যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। আমি তাদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য খুলনা থেকে আগাম টিকিট এনে দেই।’
গুটুদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শিলা রানী মণ্ডল বলেন, ‘বিজন খুব ভালো ছেলে ছিল। গ্রামে কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ করতো না। বিদেশে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েক মাস যাবত বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করছিল। সুযোগও হাতে এসেছিল কিন্তু এক দুর্ঘটনায় তাকে প্রাণ হারাতে হল।’
বিজনরা তিনভাই। বড় ভাই সুজন গাইন (৩০) ও মেঝভাই শ্যামল গাইন কৃষি কাজ করেন। এক মাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
(সূত্র- বাংলামেইল)