ফেনীতে অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছেন। বুধবার(১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। এর আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় কিন্তু তাতেও কোনো কাজ করছিল না।
নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন।
বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের চিকিৎসার বিষয়ে বেলা ১১টায় আবারও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে কথা বলা হবে।
তিনি জানান, ছাত্রীর অবস্থা আগের মতোই আছে। সে এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। আজকে আমরা আবার সিঙ্গাপুর তার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলব।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মেডিকেল বোর্ড। এর পরই ওই ছাত্রীর অস্ত্রোপচার করা হয়। লাইফসাপোর্টে রেখেই দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অস্ত্রোপচার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অপারেশন থিয়েটারে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় অস্ত্রোপচার। শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।
অস্ত্রোপচার শেষে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, সফল অপারেশন হয়েছে। এখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন ওই ছাত্রী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন যুগান্তরকে জানান, ওর শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সে যাতে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, সে জন্য এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।
তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়।
পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।তাকে লাইফসাপোর্ট দেয়া হয়েছে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার তার অস্ত্রোপচারও হয়।অস্ত্রোপচারের পরও তাকে নিয়ে শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন।
পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে। (যুগান্তর)
বার্তা কক্ষ
১০ এপ্রিল,২০১৯