সারাদেশ

ছাত্রলীগ নেতা রনির দণ্ড দেয়া বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণিকে দণ্ড দিয়ে আলোচিত বিচারক হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় দুটি গোয়েন্দা সংস্থা।

হারুনুর রশিদের ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং বর্তমান রাজনৈতিক কানেকশন খতিয়ে দেখছে সংস্থা দুটি।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সোমবার (৯ মে) থেকে দুই সংস্থা আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

হারুনুর রশিদ মহানগর হাকিম হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত আছেন। গত শনিবার (৭ মে) তিনি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য হাটহাজারী গিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুই গোয়েন্দা সংস্থার চারটি আলাদা টিম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম আদালতে গিয়ে বিচারক হারুনুর রশিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। হারুনুর রশিদ যখন ছাত্র ছিলেন তখনকার কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গেও কথা বলেন টিমের সদস্যরা। এছাড়া আদালতে গিয়ে পুলিশ-আইনজীবীসহ আদালতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিচারক হারুনুর রশিদ ছাত্রজীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, বর্তমানে তার সঙ্গে কোন রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ আছে কিনা, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি রণিকে দণ্ড দিয়েছেন কিনা কিংবা এসময় রণির ভূমিকা কি ছিল, এসব বিষয়েই আমরা তদন্ত করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা হাটহাজারীতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। রণিকে দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে কিনা, ঘটনার সময় রণির ভূমিকা কি ছিল সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, আমার কাছে তো কেউ আসেনি। হয়ত অন্যান্যদের কাছ থেকে তারা তথ্য নিয়েছেন।

বুধবার হারুনুর রশিদের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন দুই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এর আগে শনিবার (০৭ মে) বেলা সোয়া ১২টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর থেকে নির্বাচনে দায়িত্বরত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রণিসহ নয়জনকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসময় রনির কাছে একটি নাইন এমএম পিস্তল, ১৫ রাউন্ড গুলি ও ২৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এরপর তাদের হাটহাজারী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

পরে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত রণিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৬ এর দুটি ধারায় এক বছর করে মোট দুই বছর কারাদণ্ড দেন। রোববার সকালে রণিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া রণির বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত রণিকে আটকের সময় পাঞ্জাবির কলার ধরে টানাহেঁচড়া ও শারীরিক লাঞ্চনার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ঘটনার দিন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বিচারক হারুনুর রশিদ এবং হাটহাজারী থানার ওসিকে ‘জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্টও দেন।

রোববার আদালত প্রাঙ্গণে রণির মুক্তির দাবিতে সমাবেশেও সাবেক এবং বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা রণি ষড়েযন্ত্রের শিকার হয়েছে বলে দাবি করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শাহেদ সরওয়ার বলেন, হারুনুর রশিদকে আমি ছাত্রজীবন থেকে চিনি। তিনি সিলেট থেকে এসে ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে চবি’র আইন অনুষদে ভর্তি হন। শুরুতে তিনি জামায়াত অধ্যুষিত হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে এক জামায়াত নেতার বাড়িতে লজিং থাকতেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তিনি শিবির অধ্যুষিত শাহ আমানত হলে উঠেন। সেসময় আমরা যারা ছাত্রলীগ করতাম, আমরা তাকে শিবিরের দায়িত্বশীল হিসেবেই চিনতাম। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এরপর বিচার বিভাগে যোগ দেন।

তিনি বলেন, নূরুল আজিম রণিকে যেভাবে অস্বাভাবিক দ্রুত প্রক্রিয়ায় দণ্ড দেয়া হয়েছে এর পেছনে কোন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কিনা সেটি আমরা খতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ০৬:২৫ পিএম, ১০ মে ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share