May 02, 2015 @ 02 : 59 Am
চাঁদপুর টাইমস ডট কম:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুই সাধারণ ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে রেপ (ধর্ষণ) করিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেত্রী। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফা সুলতানা এই হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রীদের সাথে ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফার হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এ দিকে নেত্রী ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ ছাত্রী হলে গিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে আবারো হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এঘটনায় ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী ছাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে ইবির ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখার সভাপতি এবং আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী আরিফা সুলতানা তার কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের (২০১২-১৩) শিক্ষার্থী কল্পনাকে হলের ৩১২ নং কক্ষের একটি সিটে উঠানোর জন্য যায়।
এসময় আরিফা ওই রুমের আবাসিক ছাত্রী ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী মাহফুজা খানম এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তমাসহ ওই রুমের ছাত্রীদেরকে একটি খাট ছেড়ে দিতে বলেন।মাহফুজা ও তমার কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় তারা আরিফাকে কয়েকদিন পরে ওই ছাত্রীকে উঠানোর কথা বলেন।এ নিয়ে সাধারণ ছাত্রীদের সাথে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা ওই রুমের মাহফুজা ও তমার আসবাব পত্রসহ বই খাতা ছুড়ে ফেলে দেন।
ছাত্রীরা আরিফাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উপরও চড়াও হন। এসময় ছাত্রীরাও রুখে দাঁড়ালে ছাত্রলীগ নেত্রীদের সাথে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়।পরবর্তীতে হলের অন্যান্য ছাত্রীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা অশ্লীল ভাষায় ছাত্রীদেরকে গালিগালাজ করেন।এক পর্যায়ে আরিফা ছাত্রলীগের নেতাদের দিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে রেপ (ধর্ষণ) করানোর হুমকি দেন।
উপস্থিত ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে আরিফা ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগকে ফোন করে হলে নিয়ে আসেন।পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ হল প্রভোস্টসহ প্রশাসনের কোন অনুমতি ছাড়াই হলে প্রবেশ করেন। এসময় সোহাগের সাথে আসা ১৫/২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী হলের গেটে অবস্থান নিয়ে হই হুল্লোড় করলে ছাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সোহাগ ছাত্রলীগের নেত্রীদের দিয়ে ওই ছাত্রীদের হলের গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে হল ছাড়া করার হুমকি দেন।এ ঘটনার পর হল প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা রাত ৮ টার দিকে ঘটনা স্থলে পৌঁছে মেয়েদেরকে অভয় দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এ বিষয়ে হল প্রভোষ্ট ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘প্রশাসন কর্তৃক বরাদ্দের বাইরে হলে কোন ছাত্রীকে সিটে তোলার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি।
এরপরও যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুঃখজনক। হল প্রশাসনের সদস্যদের নিয়ে আমি বৈঠকে বসেছি। এ ব্যপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। সোহাগতো কুষ্টিয়ায় থাকে। সে ক্যাম্পাসে এসেছে সেটাও আমি জানিনা। যদি মেয়েদেরকে এভাবে হুমকি দেয়ার মত কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে ওই কক্ষের আবাসিক ছাত্রীরা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারনে অপরিচিত কোন মেয়েকে হলে ওঠানোর ব্যপারে প্রভোস্ট স্যারের নিষেধ আছে। এছাড়া আমাদের সকলের পরীক্ষা চলছে এজন্য আমরা আরিফাকে দুই একদিন দেরি করার কথা বললে আরিফা ক্ষেপে যায়। এসময় আমরা হল থেকে বের হলে ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে রেপ করানোর হুমকি দেয়াসহ বিভিন্ন বাজে ভাষায় গালাগালি করে।’
ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমাদুল হক সোহাগ বলেন, বিকেল তিনটা থেকেই হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা আমাকে ফোন দিচ্ছিলো। তাদের ফোন পেয়ে আমি সন্ধ্যায় হলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
হল ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফা সুলতানা বলেন, ‘তিন তলার ছাত্রীরা আমার এক ছোট বোনকে র্যাগ দিচ্ছিলো। আমি এঘটনার প্রতিবাদ করলে ওই ছাত্রীরা আমার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এর প্রেক্ষিতে তাদের সাথে কথাকাটাকাটি হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে ছাত্রীদের রেপ করানোর হুমকি প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন-এরকম কোন কথা আমি বলেছি বলে মনে পড়ছেনা।’ সূত্র-ঢাকার নিউজ
ডিএইচ/2015
নিয়মিত আপনার ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক করে লাইক দিন :
https://www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes