গত প্রায় দুই বছরে ছয় শতাধিক পাকিস্তানি নারী ও কিশোরীকে বধূ হিসেবে চীনের পুরুষদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সম্প্রতি এক তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে এ ঘটনায় মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তের গতি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকেই ধীর করে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদের দহরম-মহরম সম্পর্কে যেন কোনো আঁচড় না পরে সে জন্যই সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কয়েক জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গত অক্টোবরে মানবপাচারের অভিযোগ থেকে ৩১ জন চীনা নাগরিককে ফয়সালাবাদের একটি আদালত খালাস দিলে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় মামলাটি ভেস্তে যায়।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস মোট ৬২৯ জন নারী ও কিশোরীকে পাচারের তথ্য পেয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়ে বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এদেরকে পাচার করা হয়। দালালের মাধ্যমে হত দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে এদেরকে বিয়ে করে চীনা পুরুষরা। প্রতিটি মেয়ের জন্য দালালরা ২৫ থেকে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার আদায় করে। তবে মেয়ের পরিবারকে দালালরা দেয় মাত্র দেড় হাজার মার্কিন ডলার। বিয়ের পর এসব মেয়েদের চীনে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের অধিকাংশকেই দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। অনেকে আবার শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে ‘ভুয়া চীনা বিয়ের মামলা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
এতে নারী ও কিশোরীদের বিয়ের ফাঁদে ফেলে পাচারের জন্য ৫২ চীনা নাগরিক ও তাদের সহযোগী ২০ পাকিস্তানিকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে এরপরও এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়াতো দূরের কথা অভিযোগ আনা ৩১ চীনা নাগরিককে শেষ পর্যন্ত ফয়সালাবাদের আদালত খালাস দেয়। কারাগার থেকে বের হয়েই এরা দেশে চলে যায়।
চীনে এক সন্তাননীতির কারণে কন্যা সন্তানের ভ্রুণ হত্যা করায় নারী-পুরুষের সংখ্যায় অসমতা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে নারীদের তুলনায় তিন কোটি ৪০ লাখ পুরুষ বেশি রয়েছেন। তাই নারী বিক্রি বা কেনার প্রবণতা বাড়ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের পুরুষদের জন্য আঞ্চলিক দেশগুলো থেকে নারী পাচার করে আনার প্রবণতা বেড়েছে। বর্তমানে মিয়ানমার, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, নেপাল, উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে নারী ও কিশোরীদের পাচার করা হচ্ছে চীনে।
হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনের লেখক হিদার বার বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়টি হচ্ছে বধূপাচারের উৎস দেশগুলোর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে’।
আরো পড়ুন –