রাজনীতি

চিন্তিত বিএনপি

বিএনপির কাউন্সিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্থান সংকুলান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে দলটি। কাউন্সিলের মূল ভেন্যু রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন। এর পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ পেতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মোট আসন সংখ্যা ৮৩০টির মতো। হলে আসন সংখ্যার চেয়ে বিএনপির কাউন্সিলরই আছে প্রায় চারগুণ। কাউন্সিলের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রুদ্ধদ্বার পর্বে কেবল কাউন্সিলররাই অংশ নেন। সেখানে দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অনুমোদন ও নতুন পথনির্দেশনা চূড়ান্ত হয়। যেখানে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেবেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত ভেন্যুতে সকল কাউন্সিলরকে বসানো সম্ভব হবে না।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলের প্রকাশনা-বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বুধবার বিকেলে বলেন, ‘কাউন্সিল, ডেলিগেটরা আসবেন জায়গা সংকুলান নিয়ে সমস্যা তো হবেই। যেহেতু আগেই বলেছি বটতলায় হলেও সম্মেলন করা হবে। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা আছে, যত প্রতিকূল পরিবেশই হোক না কেন আমরা সম্মেলন করবই।’

তিনি বলেন, ‘এখানে প্রায় দুই হাজার ৮শ’ কাউন্সিলরই নয়, যদি কোনো বাধা বিঘ্ন না হয় তাহলে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর আসবেন সম্মেলন দেখতে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও বিদেশি ডেলিগেটদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তারাও আসবেন। সে ক্ষেত্রে আমরা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ বরাদ্দের জন্য অপেক্ষায় আছি।’

এদিকে কাউন্সিলকে সামনে রেখে সার্বিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাউন্সিলে সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়ে পরিকল্পনা ও পরামর্শের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও অঙ্গদলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ১০৫ সদস্যের কমিটি এ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে।

এ বিষয়ে শৃঙ্খলা ও সেবা উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ জানান, ‘কাউন্সিল সফলে এক শ’ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ও ডজন তিনেক আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। প্রায় এক হাজার শৃঙ্খলাকর্মী সার্বক্ষণিকভাবে পুরো এলাকা মনিটর করবে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রায় ২৬০০ জন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আসন আছে প্রায় ৮০০। কাউন্সিলের এলাকাটি যেহেতু ছোট তাই বেশি সাবধান হতে হবে।’

কাউন্সিল ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, বিএনপির কাউন্সিলে যে পরিমাণ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের উপস্থিতি ঘটবে তার জন্য বড় ভেন্যুর প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যে ভেন্যুর অনুমতি পেয়েছি তা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় এক-দশমাংশ বলা যায়।

বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসেন বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে আমন্ত্রণ জানায় বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ আমন্ত্রণ জানান।

বিএনপি নেতারা জানান, বিদেশি ডেলিগেট ও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী, দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তো থাকছেই। তবে কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিকতার জন্য অডিটরিয়ামের বাইরে স্টেজ (মঞ্চ) করা হবে।

এ ছাড়া বিদেশি অতিথি, সাংবাদিক, মেডিক্যাল টিমসহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা মূল অডিটরিয়ামের বাইরে করা হচ্ছে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জন্য অডিটরিয়াম নির্ধারিত রাখা হয়েছে। কাউন্সিলের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ জানিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, বিগত ৮ বছরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া ভাষণের সংকলন, বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের গুম-খুন-নির্যাতন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠন নিয়ে কয়েকটি প্রকাশনা থাকবে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্ম, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন ও কর্ম, বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপির অবদান, বিএনপির আদর্শ-রাজনীতি ও নেতৃত্ব নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মূল্যায়ন নিয়ে এসব বই প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক গবেষক ও বিশ্লেষকদের সুবিধার্থে খালেদা জিয়ার ভাষণের সংকলনটি করা হবে। বিএনপির ইতিবাচক রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতিবাচক রাজনীতি এবং মহাজোট সরকারের নানা অপকর্ম, দুর্নীতি নিয়ে অঙ্কিত একটি কার্টুনের সংকলন থাকবে বলেও জানান তিনি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পূর্ব পাশে কাউন্সিলরদের আপ্যায়নের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আপ্যায়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারীদের আপ্যায়নের জন্য তার নেতৃত্বাধীন উপ-কমিটি ইতিমধ্যে ১৯টি টিম গঠন করেছে। সেসব টিমের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকসহ তাদের প্রতিনিধিদের সমন্বয় করা হচ্ছে। কাউন্সিলে খাবারের বিষয়টি এই টিমগুলো জেলা কমিটির প্রতিনিধির সঙ্গে মিলে দেখভাল করবেন।

তিনি জানান, খাবার পরিবেশনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ ব্যবহারের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ শীর্ষক থিম সং নিয়ে বিএনপির কাউন্সিল আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপির সাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক ও উপ-কমিটির আহ্বায়ক গাজী মাযহারুল আনোয়ারের লেখা গানটির সুর করেছেন আহমেদ কিসলু। কণ্ঠ দিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান ও রিজিয়া পারভীন। এ ছাড়া আন্দোলন ও গণমুখী গান, চিত্রনাট্য, নাচের সমন্বয়ে পুরো পর্বটি হবে রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী। জাতীয় ও দলীয় সংগীতসহ পুরো পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান শিল্পী।

সূত্র : দ্য রিপোর্ট

||আপডেট: ১১:৫৫ অপরাহ্ন, ১৬ মার্চ ২০১৬, বুধবার

এমআরআর

Share