চাঁদপুর

চাঁদপুরে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে আরবি

মোঃ আহসানুজ্জামান হারুন চাঁদপুর সরকারি কলেজে ২২ বছর ধরে বেসরকারীভাবে পিয়নের চাকুরী করছেন। ৭০০ টাকা থেকে বেতন হয়েছে বর্তমানে ৭০০০ টাকা। কলেজের সকলে তাকে হারুন নামেই চিনেন। একই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করতো পিয়ন হারুনের বড় ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান (আরবি)।

পিয়নের ছেলে বলে অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী ঠাট্টা বা মজা করতো। আর তাদের এই ঠাট্টা বা মজা করার কারণেই পিতার কষ্টকে নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয়েছে বলে জানালেন মোঃ মেহেদী হাসান (আরবি)।

আরবি সম্প্রতি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরিক্ষায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে মেধা তালিকায় ১৬৭৭ তম হয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। আরবি পড়ালেখার পাশাপাশি গানেও পারদর্শী ছিল। সে গন সংঙ্গিত প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অর্জন করে।

জানা যায়, মোঃ আহসানুজ্জামান হারুন এর সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। স্ত্রী আকলিমা আক্তার নিজ ১৬২ নং নিজ গাছতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। স্বামী স্ত্রীর আয় দিয়েই চলে সংসার ও ছেলেদের পড়াশুনা। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান (আরবি)। সে হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চাঁদপুর সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ অর্জন করে।

আর ছোট ছেলে মাহমুদুল হাসান (সাদি) হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরিক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। বর্তমানে সে চাঁদপুর সরকারি কলেজে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত রয়েছে। দুই সন্তানকে নিয়ে পিতা মাতার রয়েছে অনেক স্বপ্ন।

আরবির মা আকলিমা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, টানাহেচড়া করে সংসার চালিয়েছি। তবে সন্তানদের পড়াশুনার ব্যয় সবসময় কষ্ট হলেও চালিয়ে গেছি। মেডিকেলে আমার সন্তান ভর্তি হবার সুযোগ হয়েছে। তা শুনে অনেক খুশি হয়েছি। এখন আল্লাহ যেন আমাদের ও ছেলের চিকিৎসক হওয়ার মনের আশা পূরণ করে সেই দোয়া করি।

মোঃ আহসানুজ্জামান হারুন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, নিজে পড়ালেখা কম করায় কাজ করতাম ইলেক্ট্রিশিয়ানের। পরে চাঁদপুর সরকারি কলেজে কাজ করার সুযোগ হয়। ২২ বছর ধরে কাজ করছি। সারাজীবন কষ্ট করেই গেলাম। ছেলে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাইছে শুনে খুশি হইছি। তবে এখানে পড়ালেখা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। পারিবারিকভাবে তো চেষ্টা করবোই। আর পাশাপাশি যদি কেউ আরবির চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরনে এগিয়ে আসে তাহলে আল্লাহর কাছে ভাল পাবে।

মোঃ মেহেদী হাসান (আরবি) বলেন, আমি পিতা-মাতার পর শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। শিক্ষকরা সবসময় ক্লাসে খেয়াল রেখেছেন, ভাল মন্দ ডাক দিয়েছেন। অনেক শিক্ষক প্রাইভেটের টাকাও নেন নি। সবসময় শিক্ষকরা পড়ালেখায় উৎসাহ যোগিয়েছেন। আর বাবা মায়ের কথা অস্বিকার করার নয়। বিশেষ করে বাবার কথা। কলেজে সহপাঠিসহ অনেকে আমাকে পিয়নের ছেলে বলে ঠাট্টা মজা করতো। তাদের কথায় আমার কখনও খারাপ লাগতো না।

আমি বলবো আমার কষ্ট নয় বরং ভাগ্য হয়েছে চোখের সামনে পিতার কষ্ট দেখতে পেয়েছি। এখন আমার স্বপ্ন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করা। এই জন্য সকলের দোয়া কামনা করি।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস বলেন, আমাদের কলেজের পিয়ন হারুনের ছেলে মেডিকেলে ভর্তি পরিক্ষায় উত্তির্ণ হয়েছে। এটা সত্যিই আনন্দের বিষয়। সে এই কলেজ থেকেই এইচএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। মেডিকেলে পড়ালেখা অনেক ব্যয়বহুল। আর্থিক সংকটে পড়লে আমরা অবশ্যই তাকে সহায়তা করব। এছাড়া কলেজে মেধাবী কোন ছেলে মেয়ে আর্থিক সংকটে পড়লে বিনার পয়সায় পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে।

সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট, ২১ এপ্রিল ২০২১

Share