ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চাঁদপুরের একজন সুপরিচিত চিকিৎসক। দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুরে তিনি চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালেরই আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সময়ের পরিক্রমায় আজ চাঁদপুরে যখন ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন-এর মতো সুশিক্ষিত, মার্জিত, ন¤্র-ভদ্র ডাক্তাররা পেশাধারী ও মানুষের সর্বপ্রকার সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন তখন মানুষ এ পেশার চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
গুণী এই ডাক্তারকে নিয়ে চাঁদপুর টাইমসের বিশেষ আয়োজন পাঠকের জন্যে প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : অসংখ্য পেশা থাকা স্বত্ত্বেও চিকিৎসা পেশা বেছে নিলেন কেনো?
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : ছোটবেলা থেকেই আামার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে সম্মানজনকভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও আর্তপীড়িতদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। তাই এ পেশায় আসা।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : আপনি কীভাবে কখন, কোথায়, কোন্ কর্মস্থল থেকে চিকিৎসক পেশার শুরু, কীভাবে করেছিলেন?
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : সর্বপ্রথম নিজের ইউনিয়ন ‘মোহনপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ থেকে কর্মজীবন শুরু।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : চিকিৎসকসেবার মতো মহান পেশায় আসার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন যাঁরা।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : আমার পরিবারের লোকজন তথা আমার মা-বাবা; বিশেষভাবে আমার প্রয়াত নানাভাই আমাকে বেশ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, যিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : আপনার পূর্বে, আপনার পেশার সূচনায় এবং বর্তমান চিকিৎসা পেশার কতটুকু পার্থক্য, মিল এবং সে সময় এবং এ সময়ের চিকিৎসা পেশার তফাৎ ও মূল্যায়ন।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : শুরুর দিকে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে আন্তরিকতা ছিলো তা যেনো দিন দিন কমে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : শুরু থেকে সহকর্মী হিসেবে যাদের পাশে পেয়েছিলেন।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. জাহিদ ও মতলব হাসপাতালের বর্তমান ইউএইচএফপিডি ডা. মাহবুব সাহেব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : চিকিৎসক বা একজন ডাক্তারের কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় এবং সফল হওয়ার উপায়।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : প্রতিমুহূর্তে চ্যালেঞ্জÑ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পাশাপাশি ও তার আত্মীয়-স্বজনদের মনস্তাত্বিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা সব সময়ই বিবেচনা করতে হয়। এছাড়া নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, সুবিধা-অসুবিধা, পারিবারিক চাহিদাও অনেক সময়ই বিসর্জন দিতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টকর।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : আপনার দৃষ্টিতে একজন যথাযথ চিকিৎসককে যেভাবে তৈরি করা প্রয়োজন।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : যথাযথ কথাটি অনেক ব্যাপক। এর জন্য চিকিৎসকদের সুশিক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসকদের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি কর্মস্থলের সঠিক পরিবেশ তৈরি করা আবশ্যক, যা এদেশে নেই বললেই চলে।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : এ পেশায় আসার জন্যে আগ্রহী নতুনদের জন্যে আপনার পরামর্শ।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : নতুন প্রজন্মের যে মানসিকতা, আমার দৃষ্টিতে চিকিৎসা পেশা না আসাই ভালো। এত প্রতিকূলতা নতুন প্রজন্ম সহ্য করতে পারবে না।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-হতাশা, সম্ভাবনা ও জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ঘটনা।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : এক রাতে ‘নাইট ডিউটি’তে বিষ খাওয়া মৃতপ্রায় এক রোগী আসল, জরুরি বিভাগে তার জন্য সবার বেশ ঘাম ঝরেছে। মডেল থানার জনৈক এসআই টহল দিচ্ছিলেন, রোগীর অবস্থা জানতে চাইলেন। বললাম, ভালো না। উনি বললেন, তাহলে অপেক্ষা করি, মরে গেলে তো আবার আসতেই হবে। পরদিন সকাল নয়টায় হাসপাতাল ত্যাগের পূর্বে রোগীর খবর নিলাম, বিছানায় বসে আছে। পোস্টমর্টেম আর করা লাগলো না।
প্রশ্ন : চাঁদপুর টাইমস : এ পেশার নাম ভাঙ্গিয়ে ডাক্তার না হয়েও অনেকে ডাক্তার নামে এ পেশায় অর্থ উপার্জন ও মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে করছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : সরকারি নীতিমালার পরিবর্তন ও আইনের বাস্তবায়ন।
চাঁদপুর টাইমস : চিকিৎসক (ডাক্তার) পেশা থেকে মানুষ, সমাজ, জাতি, দেশের কল্যাণে কতটুকু কাজ করা যায়?
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : সদিচ্ছা থাকলে এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা, মূল্যায়ন ও কাজের পরিবেশ পেলে সমাজকে বদলে দেয়া সম্ভব।
চাঁদপুর টাইমস : একজন সফল চিকিৎসকের আদর্শগত দিক কী কী হওয়া উচিত?
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : শিক্ষা জীবনের শুরুতে চিকিৎসকরা জেনেভা ডিক্লারেশনের যে শপথ নেন, সেগুলো মনে রাখলেই যথেষ্ট। সর্বোপরি, উন্নত নৈতিকতা ও চারিত্রিক উদারতা এ পেশার জন্য অপরিহার্য।
চাঁদপুর টাইমস : সাংবাদিকতা ও চিকিৎসেবা এ দু পেশার মধ্যে সামঞ্জস্য, পার্থক্য ও সমন্বয় কতটুকু সম্ভব? একটি পেশা কি অন্যটির পরিপূরক?
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : দু’টি পেশাই মহৎ যদি তার আদর্শ ঠিক থাকে। আদর্শচ্যুত ও স্বার্থান্ধ না হলে দুটি পরিপূরক।
চাঁদপুর টাইমস : আপনার নিজের মতো করে কিছু বলুন।
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিকভাবে আন্তর্জাতিক মহলে যা অবস্থান, চিকিৎসা ব্যবস্থার অবদান সেখানে সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের স্বাস্থ্যসূচকেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় থেকে আমরা অনেক এগিয়ে। এ ধারা বজায় রাখতে হলে চিকিৎসকদের গঠনমূলক পৃষ্ঠপোষকতা করা ও কাজের প্রতিবন্ধকতা দূর করা একান্ত প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের পিতার নাম মো. সাদেক মিয়া। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ফতুয়াকান্দি গ্রামে তাঁর জন্মস্থান। বর্তমানে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে আরএমও’র দায়িত্বে রয়েছেন।
|| আপডেট: ০৮:২৮ অপরাহ্ন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫