আবদুল গনি
কচুয়া-মতলবের ১শ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ হচ্ছে চলতি ২০২৪-২৫ বছর। সরকারি প্রণোাদনায় চাঁদপুরের মতলবে ৫০ একর এবং কচুয়ার ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে এবার এ চাষাবাদ হচ্ছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ ও সার এবং প্রযুক্তি প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে। এতে মোট কৃষক সংখ্যা ১৭২ জন।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ১২ জানুয়ারি এ প্রতিবেদক এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বোরোর উৎপাদনে যান্ত্রিক ব্যবহার ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে সরকারের কৃষিবিভাগ সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে চাঁদপুরের দুটো উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে সমলয়। একই সময়ে চাষাবাদ,কর্তন ও একই প্রযুক্তি প্রদান,একই বীজ ও সার প্রদান করা হয় সমলয়ে। জমির প্রকৃতি,চাষাবাদ পদ্ধতি, দুর্যোগ সম্পর্কে তথ্য ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার না জানার কারণে কৃষক ফসল উৎপাদনে বারবার ক্ষতির মুখে পড়েন। যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপণ,ধান কাটা ও মাড়াই করার সম্মুখ ধারণা কৃষকের মাঝে পৌছে দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ৫০% ভর্তুকি দিয়ে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের মাঝে সরবরাহ করছে। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এতে উৎপাদন বাড়বে ও কমবে কৃষকের খরচ।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু তাহের বলেন, ‘ খন্ড খন্ড জমিগুলো একত্র করে যান্ত্রিক ব্যবহার ও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদই হলো সমলয় চাষ পদ্ধতি। উৎপাদন বেশি, আধুূনিক, যান্ত্রিক ,লাভজনক ,সম্মানজনক ও প্রযুক্তিগুলোতে সমলয় চাষাবাদ করাই এর লক্ষ্য। ’অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত নিয়মে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মনিটরিং ও বাস্তবায়নে কাজ করছে ।
চাঁদপুর বীজ বিপননের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. খাযরুল বাশার বলেন, প্রয়োজনীয় চাহিদা মোতাবেক সমলয়ে আমরা কেবলমাত্র বীজ সরবরাহ করে থাকি। ’
এদিকে ৩ ডিসেম্বর কচুয়া উপজেলার প্রশন্নকাপ গ্রামের মাঠে রাইস প্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। এ উপলক্ষে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি তিনি বলেন, ‘ প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে সমলয় চাষ। বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট থেকে সুরক্ষা দিতে কচুয়ায় কৃষকদের মধ্যে সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সমলয় চাষাবাদ কর্মসূচির আওতায় অত্যাধুনিক পযুক্তির মাধ্যমে বোরো ধানের চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।’
এবার উপজেলা পর্যায়ে প্রশন্নকাপ গ্রামের ৭২ জন কৃষক ৫০ একর জমিতে সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও কৃষক সমাবেশে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. ওসমান গনির সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু তাহের। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো.মেজবাহ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মেজবাহ উদ্দিন জানান, ‘ সমলয় চাষাবাদ মুলত একই মাঠে একই সময়ে একই জাতের ধান চাষ, ধানের বীজ বপন, চাষাবাদ ও ধান কাটার পদ্ধতি। সমলয়ে সকল কৃষক সমান তালে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত যাবতীয় কাজ করে থাকেন। সমলয় পদ্ধতিতে ধানের বীজ প্লাস্টিকের ট্রেতে বপন করা হয়। এ আবাদ পদ্ধতিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মাড়াই মেশিন ব্যবহার করা যায়।’
এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাপ্পী দত্ত রনি,কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এম এ হালিম,উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শম্ভুনাথ দাস,অমল চন্দ্র সরকার, ফারুকুল ইসলাম,প্রেসক্লাবের সভাপতি আতাউল করিমসহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কৃষক প্রতিনিধি মাও.শাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘ সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে আবাদ করে কৃষকের লোকসান কমে গেছে। ধান রোপণের খরচও কমেছে। রাইস প্লান্টার মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করায় শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হয়েছে। সকল চাষী একই সঙ্গেএকই পদ্ধতিতে ধানের আবাদ করে থাকি। সমলয় পদ্ধতিতে আবাদ করায় কৃষক উপকৃত হচ্ছে। এতে আমাদের ধানের উৎপাদন বেড়েছে। জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করেই আমরা চাষাবাদ পদ্ধতি শিখেছি। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’ সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে আবাদ করে কৃষকের লোকসান কমে গেছে। ধান রোপণের খরচও কমেছে। রাইস প্লান্টার মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করায় শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হয়েছে। সকল চাষী একই সঙ্গেএকই পদ্ধতিতে ধানের আবাদ করে থাকি। সমলয় পদ্ধতিতে আবাদ করায় কৃষক উপকৃত হচ্ছে। এতে আমাদের ধানের উৎপাদন বেড়েছে। জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করেই আমরা চাষাবাদ পদ্ধতি শিখেছি। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২১ সালে দেশে প্রথম সমলয় চাষাবাদ শুরু হয় ঝিনাইদহের হলিধানী ইউনিয়নের গাগান্না গ্রামে। এবার দ্বিতীয় পর্বে একই এলাকায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমলয় চাষাবাদ এর মাধ্যমে রাইস প্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আবদুল গনি
১৩ জানুয়ারি ২০২৫
এজি