জাতীয়

বাড়তি দামে চাল ডাল চিনি তেলে দিশেহারা ভোক্তা

দেশে উৎপাদিত হলেও এক মাস ধরে বাড়তি দামে চাল খাচ্ছে ভোক্তারা। নতুন করে বেড়েছে চাল ডাল চিনি তেলের দাম। দেশে বন্যা ও বৃষ্টিতে সরবরাহ সমস্যা আর আন্তর্জাতিক বাজারে কভিড-১৯-এর প্রভাবে উৎপাদন কম। এর কারণে দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।

বাজারে এসব পণ্যের বাড়তি দামে ভিড় বাড়ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্য মূল্যের পণ্যের দোকানে।

বোরো মৌসুমের ধান ওঠার পর মাস দুয়েক কিছুটা কম দামে চাল বিক্রি হলেও গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আবার বাড়তে থাকে। এক মাসে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। টিসিবির হিসাবে গত বছরের তুলনায় বর্তমান চালের দাম ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। এখন ৪৪ টাকার নিচে কোনো চালই নেই। চিকন চাল কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকা পর্যন্ত দামে।

চালের এই মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে গত সপ্তাহে বেড়েছে ডালের দাম। মসুর ডালের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না বড় দানার কম দামি ডালও। ছোট দানার ডাল কিনতে হচ্ছে ১২৫ টাকা পর্যন্ত দামে। টিসিবির হিসাবে বর্তমানে ডালের দাম আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।

চাল-ডালের পর চলতি সপ্তাহে বেড়েছে ভোজ্য তেলের দামও। এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে চার টাকা। ৮৪ টাকার নিচে নেই কোনো সয়াবিন তেল। কম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের দাম বাড়িয়েছে লিটারে পাঁচ টাকা। ১১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে এক লিটার তেল। সয়াবিন তেলের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, “সপ্তাহখানেক আগে সয়াবিনের ‘মণ’ কেনা গেছে তিন হাজার ৫০ টাকায়। এখন তা তিন হাজার ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। মিল থেকে দাম বাড়ালে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।” একইভাবে চিনির দামও বাড়ছে বলে তিনি জানান।

জানতে চাইলে ভোজ্য তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, ‘সয়াবিন আসে মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ দুটি দেশে করোনার প্রভাবে তেলের উৎপাদন কম। ফলে কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে। তবে আমরা দেশে দাম কমিয়েছিলাম। এখন সেটাই আবার বাড়ানো হয়েছে।’

বাড়ছে চিনির দামও। গত মাসের তুলনায় দাম বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে চিনি এখন ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। এই দাম আগের মাসের তুলনায় আড়াই শতাংশ আর আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। তবে পাইকারিতে দাম আগের মতোই আছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি হাজি আবুল হাশেম বলেন, পাইকারিতে আগেও চিনির কেজি ৫৫ টাকা ছিল, এখনো রয়েছে। বরং মিলগেটে কেজিতে ৫০ পয়সা বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায় মুনাফার কোনো নীতিমালা না থাকায় যেমন খুশি তেমন দাম রাখছে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে বর্ষা ও বন্যা উপলক্ষে টিসিবির ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনতে ভিড় দেখা গেছে ডিলারের ট্রাকগুলোতে। গত ১৭ আগস্ট থেকে দেশে চলমান করোনাভাইরাস মহামারি ও বর্তমান বন্যায় পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে শুরু করে টিসিবি। ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। ট্রাক থেকে প্রতি কেজি চিনি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়, মসুর ডাল ৫০ টাকা, সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটার।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ক্রেতাদের পণ্য কিনতে ভিড় দেখা গেছে। দুপুর ১২টায় মধ্যবাড্ডা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ১০০-১৫০ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে পণ্য কিনতে। আলমগীর নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে এসব পণ্যের দাম অনেক। এর ওপর কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম বাড়ছে। তাই অন্য কাজ ফেলে কিনতে আসছি।’

জানতে চাইলে টিসিবির ডিলার মাহিরা ট্রেডার্সের মালিক মামুন বলেন, মাঝখানে বেশ কয়েক দিন ক্রেতার তেমন ভিড় ছিল না। ৫-১০ জনের লাইন থাকত। কয়েক দিন ধরে ভিড় বেড়েছে। এলাকাভেদে ভিড় আরো বেশি থাকে। সবচেয়ে বেশি থাকে পুরান ঢাকার ট্রাকগুলোতে।

মালিবাগ, প্রেস ক্লাব, মতিঝিলসহ রাজধানীর ৪০টি পয়েন্টে টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। সবখানেই ভিড় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিলাররা। দেশব্যাপী ট্রাকের সংখ্যা ২৭৭টি।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ২৪ আগস্ট ২০২০

Share