বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই, তবুও বাড়ছে চালের দাম

দেশে এ বছর আমনের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই, তার পরও চড়ছে চালের দাম। গত চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়তি। আর ভরা মৌসুমে কমছে না সবজির দর। তবে দাম বাড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও নানা অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সাধারণত নতুন ধান ওঠার আগ মুহূর্তে চালের দর কিছুটা বাড়তি থাকে। কিন্তু মাস খানেক ধরে বাজারে নতুন ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ চালের দাম বাড়তি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা ঘুরে দেখা যায়, সরু চাল (মিনিকেট) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে, যা চার-পাঁচ দিন আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। মাঝারি চাল (বিআর-২৮, পাইজাম) প্রতি কেজি তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। দুই টাকা বেড়ে মোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। এ ছাড়া পোলাও চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।

চালের দর বাড়ার জন্য পাইকাররা দায়ী করছেন মিলারদের। আর মিলাররা বলছেন, অবৈধ মজুতের কারণে দর বাড়ছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ইসমাইল অ্যান্ড সন্স রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চালের দাম বাড়ায় মিলারদের কারসাজি রয়েছে। ধান না পাওয়ার অজুহাতে তারা এক সপ্তাহ ধরে দাম বাড়াচ্ছেন।’

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘সম্প্রতি আমন ধান উঠেছে, এখন চালের ভরা মৌসুম। এমন সময়ে পণ্যটির দাম বাড়ার ঘটনা রহস্যজনক। এর পেছনে লাইসেন্সবিহীন মজুতদাররা রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘ধান-চাল থাকার কথা কৃষক ও মিলারের কাছে। কিন্তু মজুত করছেন স্টক ব্যবসায়ীরা। সরকারের কঠোর মনিটরিং দরকার। তা না হলে দাম কমবে না।’

মাস দেড়েক আগে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে কমে ৬০০ টাকা হয়। সপ্তাহ দুয়েক এই দরে বিক্রির পর ব্যবসায়ীরা নির্বাচন পর্যন্ত প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা দর নির্ধারণ করেন। গত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এ দরেই বিক্রি হলেও পরদিন থেকে আবার প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য ৬৫০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে। খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা।

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার মাংস ব্যবসায়ী এনামুল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে মাংস বিক্রি নিয়ে বড় গেম হয়েছে। বিস্তারিত বলা যাবে না। দুই মাসে হাজার হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই এখন গরুর মাংসের দর বাড়ছে।’

সপ্তাহ খানেক আগে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা হয়। তবে এখন আরও ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগির দর প্রতি কেজি ৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২০ টাকা। ডিম গত সপ্তাহের মতোই ডজন ১৩০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। মাংসের পাশাপাশি মাছের বাজারও কিছুটা বাড়তি।

এখন শবজির ভরা মৌসুম। এর পরও সবজি কিনতে যেন ঘাম ছুটছে ক্রেতাদের। অন্য বছর এমন সময় শিমের কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, এবার তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি ফুল ও বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। বাজারে প্রচুর নতুন টমেটো; কিন্তু দাম চড়া। প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে।

আলুর বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা এখনও ফেরেনি। অন্য বছর মৌসুমে আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে থাকে। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। পুরোনো আলুর দাম আরও বেশি। ব্যবসায়ীরা কিছুটা বড় আকারের পুরোনো আলু প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। এ ধরনের আলুর ক্রেতা সাধারণত হোটেল-রেঁস্তোরার।

দুই সপ্তাহ আগে ছোলার কেজি ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গতকাল তা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। ছোলার ডালের কেজি ছিল ১০০ টাকার আশপাশে। দর বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।

গত বছর এমন সময় নতুন পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এবার সেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দিয়ে। রসুনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি জাতেরটা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ এবং চায়না ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১২ জানুয়ারি ২০২৪

Share