রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শগুনদীঘি তিরিন্দ্রা গ্রামে লিটনের বাড়ি। পরের বাড়িতে কাজের পাশাপাশি অন্যের জমিতে সামান্য চাষাবাদ করে জীবন কাটে তার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তার বাড়িতে শুরু হয় হুলুস্থুল কাণ্ড। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে চামেলী আক্তার (১৪) রাতে ঘুমিয়ে ছিল। সকালে উঠে নাকি সে ছেলে হয়ে গেছে। খরবটা গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো মুহূর্তে। এরপর থেকেই লিটনের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড়।
চামেলী রাতে ঘুমিয়েছে মেয়ে হয়ে আর ঘুম ভেঙে জানায় যে, সে ছেলে হয়ে গেছে। মানুষের মুখে নানান কথা। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে চিকিৎসকরা জানান, তার শারীরিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। এরপরই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চামেলীকে দেখতে বুধবার ছেলেপক্ষের লোকজন আসে। তাকে তারা দেখেও যায়। কিন্তু চামেলীর সঙ্গে একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না বলেই সে এমন নাটক করেছে।
চামেলী জানান, বুধবার রাতে সে স্বপ্নে দেখে যে, ছেলেদের পোশাক পরে সে সাইকেল চালিয়ে বেড়াচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে সে তার পরিবর্তন লক্ষ্য করে। বিষয়টি সে তার মাকে জানালে হকচকিয়ে যান তিনি। পরে তার মা বিষয়টি দাদী নুরজাহানকে জানান।
ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে বাড়িতে। চামেলী ও তার দাদী ছেলে হওয়ার বিষয়টি দাবি করলেও তার দেহ ও কন্ঠস্বরের কোনো পরিবর্তন বোঝা যায়নি।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মা ও বাবা মিলে চামেলীকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, চামেলীর মধ্যে কোনো ধরনেরই পরিবর্তন আসেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক ডা. হোসেন আলী জানান, চামেলী আক্তারের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো পরিবর্তন পাওয়া যায়নি। হরমনজনিত কারণে এই রকম পরিবর্তন ধিরে ধিরে ঘটতে পারে। কিন্তু চামেলীর ক্ষেত্রে এমন কিছুই ঘটেনি।
চিকিৎসকের কাছে নিশ্চিত হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেরিয়ে আসতে শুরু করে চামেলীর ছেলে হওয়া নাটকের রহস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চামেলীর এক নিকটাত্মীয় জানান, চামেলীর সঙ্গে এক ছেলের মন দেয়া নেয়া চলছে। কিন্তু তার মা-বাবা অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন। বুধবার ছেলেপক্ষের লোকজন চামেলীকে পছন্দও করে গেছে। চামেলী এ বিয়ে করবে না বলেই এমন নাটক করেছে। নাটকটি জমাতে চামেলী তার দাদীর সহযোগিতা নিয়েছে।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৯:২৯ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার
এমআরআর