Home / চাঁদপুর / চান্দ্রা ইমাম আলী স্কুল এন্ড কলেজের বিতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত
চান্দ্রা

চান্দ্রা ইমাম আলী স্কুল এন্ড কলেজের বিতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত

অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বিতর্কিত প্রভাষক (আইসিটি) মাসুদুর রহমান মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আনিত সকল অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ‌তবে অভিযুক্ত ও বিতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমান মজুমদার স্বপদে বহাল থাকতে তার রাজনৈতিক অপশক্তির ব্যবহার করে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২ অক্টোবর, চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শাহ্ মো. মকবুল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে সাবেক শিক্ষার্থীদের আনিত অভিযোগ ও তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এডহক কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্ত কালীন সময়ে তিনি বিধি মোতাবেক ভাতা প্রাপ্য হবেন।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমান মজুমদারের বিচার ও বরখাস্তের দাবি করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। ‌যার অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর প্রদান করা হয়।

চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের আইসিটি প্রভাষক মাসুদ মজুমদার এজন দুর্নীতিগ্রস্থ, নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি। তার প্রতিটি কর্মে ও আচরণে চারিত্রিক জ্বলন ও কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী আচরণ স্পষ্ট। রাজনৈতিক মদদে তিনি নিজেকে এতটাই ক্ষমতাধর মনে করতেন যে, তার কারনে ছাত্র-ছাত্রী এমনকি অভিভাবকদের সাথেও অশালীন এবং অসৌজন্য আচরণ করতেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শ্রেনিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নোংরা, অশ্লীল ও অশ্রাব্য গালমন্দ করা। এর থেকে তার সহকর্মীগণও রেহাই পেতো না। পরিক্ষায় ফেইল করে দেবার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে এবং তার তৈরী লেকচার শিট ক্রয় করতে বাধ্য করানো।‌

অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল ও গরিব ছাত্রীদের টার্গেট করে তার নোংরা বাসনা চরিতার্থ করার চেষ্ট করা, মোবাইল ফোনে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, ভর্তি, ট্রান্সফার ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজেও একটি সিন্ডিকেট করে নিজে সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া ইত্যাদি। শুধু তাই নয় মাসুদ মজুমদারের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগও রয়েছে যা ছাত্র হিসেবে শিক্ষকের কাছে লিখে জানাতেও লজ্জাবোধ করছি। এমতাবস্থায় এই প্রতিষ্ঠানের গৌরব ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে নৈতিক স্খলনজনিত প্রভাষক (আইসিটি) মাসুদ মজুমদারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের প্রেক্ষিতে তাকে বরখাস্ত করে বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের অনুরোধ করছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমান মজুমদার ২০১৫ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এখানে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এমপিও ভুক্ত হন। ‌মূলত এরপর থেকেই তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা বিহীন বিভিন্ন অপকর্ম জড়িয়ে পড়েন। আইসিটির শিক্ষক হওয়ায় নানা কারণে তিনি অন্যান্য শিক্ষকদের উপর খবরদারি শুরু করেন। ‌তার কারণে শিক্ষকদের মাঝেও বিভাজন ও গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির অনেক শিক্ষকও চাচ্ছেন না, বিতর্কিত শিক্ষক মাসুদুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানে থাকুক। ‌

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন বর্তমান শিক্ষার্থীরা জানান, মাসুদুর রহমান স্যার এখানে দায়িত্ব পালন করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। ‌ তার কারণে শিক্ষকদের মাঝেও অনৈক্য এবং গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে।‌ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এতে করে এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ‌ যার কারণে আমরা স্থায়ীভাবে তার বরখাস্তের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ‌ শাহ্ মো. মকবুল আহমেদ জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আইসিটির প্রভাষক মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। ফলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ‌‌

বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, শিক্ষকদের মধ্যে অনৈক্য দূর করাসহ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, এটি সম্পূর্ণ কমিটির বিষয়। ‌দুই একজন শিক্ষক হয়তো চাচ্ছেন না তিনি এই প্রতিষ্ঠানে থাকুক। এরমধ্যে কোচিং পড়ানোর বিষয়টি রয়েছে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক চাচ্ছেন তিনি এই প্রতিষ্ঠানে থাকুক।

স্টাফ রিপোর্টার, ৭ অক্টোবর ২০২৪