চাওয়া-পাওয়ার সময় নয় আগে দেশ বাঁচা

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘এখন চাওয়া-পাওয়ার সময় নয়, আগে দেশ বাঁচান। কে কী পাব, সেটা আজ বড় কথা নয়। বড় কথা হলো- গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশটাকে রক্ষা করতে হবে ও মানুষের কল্যাণে আবারও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

পবিত্র মাহে রমজানের দশম দিন বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বেগম জিয়া। রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম।

সরকারকে ‘অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও খুনি’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সরকার নিজেই রাষ্ট্রদ্রোহী। কারণ, বর্তমান অবৈধ সরকার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র করছে। যেটা জনগণ জানে না। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে।’

বেগম জিয়া বলেন, ‘সরকার নিজেই রাষ্ট্রদ্রোহী। অথচ তারা অন্যায়ভাবে অন্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে। কিন্তু এই সরকার দেশের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করছে। তাই আজকে দেশের মানুষকে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক নেতারা যারা স্ব স্ব প্লাটফর্ম থেকে একই কথা বলছি, তাদের উচিত দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। কে কী পাব, সেটা বড় কথা নয়। অর্থাৎ চাওয়া-পাওয়াটা আজ বড় নয়। আমাদের কাছে বড় কথা হলো- গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা, দেশটাকে রক্ষা করা ও মানুষের কল্যাণ করা।’

সরকারকে ‘ব্যর্থ, অযোগ্য, অথর্ব, দুর্নীতিবাজ, খুনি, অত্যাচারী ও গুম-হত্যাকারী’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এরা (আ.লীগ) অসংখ্য মানুষকে খুন করে চলেছে, অনেক অপরাধ করছে। তাই আসুন, আমরা রমজান মাসে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন খুন-গুম ও অত্যাচারের জন্য এদের শাস্তি দেন।’

দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সামনে নিশ্চয় শুভদিন আসবে। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করি, যাতে জনগণের কল্যাণ করা যায়।’

সরকার পুরো দেশটাকেই কারাগার বানিয়েছে- এমন অভিযোগ করে বেগম জিয়া বলেন, ‘জঙ্গি দমনে সাঁড়াশি অভিযানের নামে এখন পর্যন্ত ১২ হাজারের অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় ২ হাজার ৭শ’ জন নেতাকর্মী রয়েছে।’

সাঁড়াশি অভিযান প্রসঙ্গে তিনি দাবি করে বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য সন্ত্রাসী ধরা নয়। জঙ্গি দমনের নামে বিএনপি ও এর সমর্থক, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বিএনপিকে যারা ভালোবাসেন এমন নিরীহ মানুষকে জেল খাটানোই তাদের আসল লক্ষ্য। সেজন্য তারা আসল সন্ত্রাসীদের নির্দিধায়-নির্ভয়ে বিদেশে পার করে দেয়।’

এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, সরকার নিরীহ মানুষকে ধরে পুলিশ ভ্যানে ভরছে। আর তাদের স্বজনরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আহজারি করছে। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছে না। এই হচ্ছে সরকারের দেশ চালানোর নমুনা।’

খালেদা জিয়া ইফতারের পূর্বে টেবিল ঘুরে ঘুরে অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। এর আগে, সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে ইফতার মাহফিলে এসে পৌঁছান তিনি।

মূল মঞ্চে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই টেবিলে বসে ইফতার করেন- এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুল হালিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, পিপলস লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ইসলামিক পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. এজাজ হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।

ইফতারে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বেগম সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

ইফতার মাহফিলে ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান ও সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, বিএমএল’র মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর হোসেন ঈসা, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ উদ্দিন, ডিএল যুগ্ম সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস প্রমুখ।

ইফতারে এলডিপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ, মামদুদুর রহমান চৌধুরী; সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, যুগ্ম মহাসচিব খালেদ সাইফুল্লাহ, তমিজউদ্দিন টিটু প্রমুখ। (বাংলামেইল)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৫:০০ এএম, ১৭ জুন ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share