ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিউর রহমান সামিন (১১) । সে এখন আর আগেরমতো তার ডান হাত দিয়ে লিখতে, খেলতে বা অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। এমনকি স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে তার। পুরো হাত জুড়ে এখন শুধু প্লাস্টার ।
ক্লাশ চলাকালীন সময় সহপাঠির সাথে সামান্য কখা বলার অপরাধে ডাস্টার দিয়ে পিটিয়ে সামিনের ডান হাত অকেজ করে দিয়েছেন ক্লাশ শিক্ষক সাইফুল্লাহ খান।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকালে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষকদের চাপে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করলেও ওই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ফাঁস করে দেয়।
এনিয়ে অভিভাবকমহল ও শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষুব্ধ হলেও ওই স্কুলের কোনো শিক্ষকই এ ঘটনায় একটুও বিচলিত নন।
চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার সরকারি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল বারেকের ছোট ছেলে আহত শিক্ষার্থী সামিউর রহমান সামিনের বাসায় গিয়ে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘বুধবার সকালে স্কুলের ষষ্ঠ শ্র্রেণির খ বিভাগে ক্লাশ চলা অবস্থায় ৪৯ রোল নাম্বারের শিক্ষার্থী সামিন তার পাশে বসা অপর শিক্ষার্থী হাসিবের সাথে একটু কথা বলে। এ সময় ক্লাশের কৃষি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক সাইফুল্লাহ খান তাদের দুজনকে এসে কথা বলার অপরাধে হাতে থাকা ডাস্টার দিয়ে মারধর করতে থাকে। এসময় সামিনের ডান হাতের কনইতে চরমভাবে আঘাত লেগে কুনুইর হাড় ফেটে যায়। এ অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থী সামিন বাসায় চলে আসার পর বিকেলে তার ডান হাত ফুলে গেলে বিষয়টি সামিন তার মাকে জানায়। তার মা ডেইজি আক্তার পরদিন সকালে স্কুলে গিয়ে বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানালে একজন শিক্ষক ও শিশুর মাকে দিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনালের হাসপাতালে সামিনকে নিয়ে যায়। সেখানে এক্সরে করে সামিনের ডান কুনুই ফেটে ভেঙে যাওয়া তাকে প্লাস্টার করে ২১দিন পর যোগাযোগ করতে বলেন।
সামিনের মা ডেইজি আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তান অন্যায় করলে শিক্ষক শাষণ করতে পারেন। কিন্তু এভাবে হাতটি ভেঙে তার জীবন অকেজ করার যে অন্যায় শিক্ষক করেছেন তার বিচার হওয়া উচিত। কারণ আমার ছেলে এখন আর স্কুলে যেতে পারে না। ডান হাত দিয়ে কোনো কাজও করতে পারে না।’
চঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিবুল হাসিব বলেন, ‘বড় ধরণের আঘাতে ওই শিশুটির ডান কুনইর হাঁড় ফেটে গেছে। তবে ভাল হতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে।’
স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮ম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ‘ওই শিক্ষক ছাড়াও কৃষি শিক্ষার অপর শিক্ষক মাহমুদুল হাসানও সোমবার একাধিক শিক্ষার্থীকে স্টিলের স্কেল দিয়ে মারধর করে।
মাকসুদুর রহমান নামে একজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা বাড়িতে প্রাইভেট পড়িয়ে মাথা গরম হয়ে স্কুলে এসে ক্লাশে আর পড়ান না। তখন স্কুলের বাচ্চাদের উপর শুধ শুধু নির্যাতন শুরু করে। এসব শিক্ষক ভাল স্কুল থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।’
এ ব্যপারে অভিযুক্ত স্কুলের শিক্ষক সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘সামিন স্কুলের ক্লাশে পেছনে বসে দুস্টমি করছিল। আমি তাকে শাষণ করতে গেলে তার হাত টেবিলের সাথে লেগে ভেঙে যায় বলে দাবি করেন। তবে এটা ঠিক হয়নি বলেও শিকার করেন ওই শিক্ষক।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি ঘটনাটি পরদিন শিশুর অভিভাবক থেকে জেনেছি। সাথে সাথে একজন শিক্ষক দিয়ে শিশুকে হাসপাতালে পাঠাই। এবং শিক্ষককে এ ধরনের যেন আর ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেই।’
চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার ইউনুস ফারুকী বলেন, ‘স্কুলে কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিক বা মানসিক কোনো ভাবেই শাস্তি দিতে পারেন না। আর এটি করে থাকলে ওই শিক্ষক জঘন্য অপরাধ করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ এলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে বলবো।’
করেসপন্ডেন্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১: ০০ এএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ