প্রায় দুই দশক ধরে চলা চাঁদপুর সেতুর টোল যেখানে পুরোপুরি বন্ধ করার কথা, সেখানে কিনা উল্টো নতুন নোকতা লাগানো হয়েছে।
২ জুলাই সোমবার থেকে মোটরসাইকেলকেও টোলের আওতায় আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুরের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পর অবশ্য সোমবার বিকেলেই মোটরসাইকেলের ওপর থেকে টোল প্রত্যাহার করা হয়। প্রশ্নটা কেবল মোটরসাইকেল নিয়ে নয়, বরং পুরো টোল বন্ধ না হওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও।
ঢাকা থেকে বাড়িতে আসা-যাওয়া এই পথে আমাদের চাঁদপুর সেতু ব্যবহারের বিকল্প নেই। চাঁদপুর ঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে সিএনজি দিয়ে শহর পেরিয়ে সেতুটি দিয়েই আমাদের যেতে হয়। ২০০৫ সালে উদ্বোধন হওয়ার আগ থেকেই সেতুটির সঙ্গে যোগাযোগ। ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানুষ ঢাকার লঞ্চে উঠতে ইচলি যেত। এ সেতুর কারণে জমজমাট ইচলি হয়ে গেল প্রাণহীন। চাঁদপুর সদরের ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুরকে সংযুক্ত করেছে। আঞ্চলিক মহাসড়কে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের দুই দশক পার হলেও টোল আদায় বন্ধ হচ্ছে না। খবরে প্রকাশ, ইতোপূর্বে সেতুটি নির্মাণের দ্বিগুণের বেশি অর্থ উঠে গেছে। সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও যানবাহন থেকে টোল আদায় চলছেই। উল্টো সোমবার থেকে নতুন করে মোটরসাইকেলে টোল নেওয়ার মাধ্যমে যেন ভিন্ন বার্তাই দেওয়া হয়েছে।
মোটরসাইকেলের ৫ টাকা টোল আদায়ের রসিদ অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। টাকার অঙ্ক যা-ই হোক, হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত? মোটরসাইকেলে টোল আদায়ে যানজট বাড়ছে, সেটাও মুখ্য নয়। মূল বিষয়, জনবিরোধী সিদ্ধান্ত কেন? টোল নিচ্ছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর সঙ্গে প্রশাসনের পরোক্ষ সংযোগ অস্বীকারের উপায় নেই। এমনও হতে পারে, অন্যান্য বারের চেয়ে সরকারের কোষাগারে বেশি অর্থ দিয়ে এটা জায়েজ করা হচ্ছে। মোটরসাইকেলকে অন্তর্ভুক্ত করাই নয়, বরং পুরো টোল ব্যবস্থা জারি রাখার উপায় এটি। এতে জনসাধারণের পকেট কাটলেও কিছু মানুষের যে পকেট ভারী হচ্ছে, তা বলাই যায়।
কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, চাঁদপুরের মানুষ এ সেতুর টোল বন্ধে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। চাঁদপুরের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় এমপিদের কাছে যেমন স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, তেমনি ঢাকার চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ফোরামও প্রশাসনিকভাবে টোল বন্ধে চেষ্টা করেছে। এমনকি ২০২১ সালের গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এটি বন্ধের পক্ষে কাজ করেছিলেন। তা ছাড়া টোল বন্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কিংবা মানববন্ধনের কথা বলাই বাহুল্য। এর পরও কোন অদৃশ্য কারণে এভাবে টোল আদায় হচ্ছে? অথচ একই সময় নির্মিত চাঁদপুর পুরান বাজার-নতুন বাজার সেতু ও হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সেতুর টোল বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ করা হয়।
২০১৪ সালে টোল আদায় পদ্ধতিকে স্বচ্ছ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে নীতিমালা করা হলেও চাঁদপুর সেতুর টোল যেভাবে এখনও চলছে, সেটা অগ্রহণযোগ্য। সড়ক বিভাগের উচিত হবে চাঁদপুর সেতুর টোল পুনর্বিবেচনা করা। যেখানে প্রয়োজনীয় অর্থের অধিক অর্থ উঠে গেছে, সেখানে জনভোগান্তির এ উপলক্ষে চলতে পারে না। মোটরসাইকেলের ওপর টোল ধার্যে যে গণজাগরণ দেখা গেছে, অনতিবিলম্বে এ টোল পুরোপুরি প্রত্যাহার না হলে তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল