চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেছেন ‘আমরা চাঁদপুরকে বিশ্বব্যাপি আরো বেশী পরিচিত করতে ‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’ নামকরণ করেছি। এর বাংলা সংস্করণে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ লেখা হবে। সরকার বাংলাদেশে ৫টি স্থানে ইলিশের অভয়আশ্রম ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম একটি অভয়াাশ্রম। চাঁদপুরের একশ’ কিলোমিটার নদী এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
চতুরঙ্গের আয়োজনে ‘জেগে উঠো মাটির টানে’ এ শ্লোগানে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টম্বর) ইলিশ উৎসবের প্রথম দিন সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরের সচেতন মানুষের সাথে কথা বলে ইলিশ সংরক্ষণে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। চাঁদপুরের পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ সকলকে সাথে নিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষার কর্মসূচি পালন করেছি। যার ফলে দীর্ঘ ৫০ বছর পরে চাঁদপুর ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি জেলায় ইলিশ পাওয়া গেছে। এর ফলে গত বছর ওই সময়ে চাঁদপুরে অসাধু জেলেরা খুব একটা জাটকা ও মা ইলিশ নিধন করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি, যাতে ইলিশ রক্ষায় জেলেদেরকে চাল সহায়তা বাড়ায় এবং তাদের নগদ এক হাজার টাকা দেয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। এবছর চাঁদপুরে ২৮ হাজার জেলেকে ভিজিএফ কার্ডের চাল সহায়তা দিয়েছিলো। এবছর আমরা ৪১ হাজার জেলেকে ভিজিএফ কার্ডের চাল দিয়েছি।’
জাটকা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘জাটকা রক্ষার সময়ে সাড়ে ৭শ’ জেলেকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আপনারা যদি শপথ করেন এবছর জাটকা ইলিশ খাবেন না। তবে কথা দিচ্ছি যে যদি আমি চাঁদপুরে থাকি তাহলে আগামি বছর আপনারা এক কেজি ওজনের ইলিশ খেতে পারবেন। এবছর যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের সচেতনতার কারণেই সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘চাঁদপুরে নৌ-পুলিশ সুপার নিয়োগ দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষার করার জন্য। জেলা প্রশাসক কাজ করেন না, কাজ করিয়ে নেন। আমি কথা দিচ্ছি এবছর মা ইলিশ রক্ষা মৌসুমে নদীতে একটি নৌকাও নামতে দেয়া হবে না।’
অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে চাঁদপুর পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পৃথীবির সবচেয়ে সুস্বাধু মাছ হলো ইলিশ। এ ইলিশ আমাদের চাঁদপুরের গর্ব। একটা সময় চাঁদপুরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেতো। যার ফলে আমাদের নিত্যাদিনের খাদ্য তালিকায় ইলিশ ছিলো। কিন্তু একটা সময়ে ইলিশের ছন্দ-পতন ঘটে। এক শ্রেণীর অসাধু জেলে জাটকা নিধন করে ইলিশ সম্পদ নষ্ট করে দিচ্ছিলো। তাছাড়া ওই অসাধু জেলেরা ডিম ওয়ালা মা ইলিশ নিধন করে ইলিশ উৎপান ব্যহত করেছে। যার ফলে সরকার জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় ব্যপক কর্মসূচি হাতে নেয়। আজকে ইলিশের সেই হারানো গৌরব ফিরে আসতে শুরু করেছে।
পৌর মেয়র বলেন, ‘আজকের এ আয়োজনে আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ করবো ইলিশ সংরক্ষণ সময়ে জেলেদের চাল না দিয়ে নগদ টাকা দেয়া হোক। এতে করে জেলেরা আর নদীতে নামবে না। তখন তারা নিজেরাই জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ করবে। আগামিতে সরকারের জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষন শক্ত হাতে সফল করা হবে।’
আলোচনা শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধোর সময়ের বিএলফ কমান্ডরা মো. হানিফ পাটওয়ারীকে ইলিশ উৎসবের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এসময় ইলিশ উৎসবে অংশগ্রহণকারী সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকর্তা, সদস্যদের ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্য এবং চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রাণ-আরাএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সংক্রান্ত আরেকটি প্রতিবেদন দেখুন…..‘সারাদেশের মধ্যে চাঁদপুরকে ব্রান্ডিং জেলা ঘোষণা করেছে সরকার’.