বিগত ১৫ বছরে পতিত আওয়ামী লীগ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীকে কুক্ষিগত করার জন্য কবি ও সাহিত্যিকদের এই সুন্দর প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ফ্যাসিবাদী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে। সদস্য সংখ্যা ১৮০০ থেকে গণহারে বাদ দিয়ে ১৪১ জন, তার থেকে ১০০ জনকে বাদ দিয়ে নতুন ৭০ জনকে যুক্ত করে ১২০ জন চুড়ান্ত করে। সেই ১২০ জনের চুড়ান্ত তালিকা ধরে কোন যুক্তিতে নির্বাচন হবে জানতে চায় গণহারে বাদপড়া লেখকরা?
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর ১৪ মে ২০১০ খ্রি: তারিখে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির কার্যকরী কমিটির সভা করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনির আশীর্বাদ পুষ্ট জেলা প্রশাসক ও সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি প্রিয়তোষ সাহা। সভা পরিচালনা করেন সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর শাহিন খান। সভার অনুমোদিত রেজুলেশনের ৬ নং আলোচ্য সূচিতে “সদস্যপদ সংক্রান্ত” বিষয়ে তখন চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর তালিকাভুক্ত সদস্য সংখ্যা ১৯৫৭ জন দেখানো হয়। এর মধ্যে বাছাইকৃত ১৮০০ জনের কথা উল্লেখ করে। পরম বিক্রির অর্থ সংশ্লিষ্ট খাতে জমা করা আছে মর্মে রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর ডা: দীপু মনির নির্দেশে তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীকে আওয়ামীকরণের পদক্ষেপ নিতে থাকে। সাহিত্য একাডেমীকে আওয়ামী দলীয়করণ করে কুক্ষিগত করতে ১৮০০ জন স্থায়ী সদস্যকে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া বেআইনি ও অগঠনতান্ত্রিক ভাবে বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দমত সদস্য করে নেয়।
২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি: তারিখে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক বর্তমানে আওয়ামী দোসর হিসেবে জেলখানায় আটক মো: ইসমাইল হোসেন। ঐ সভায় সদস্যদের উপস্থিত ভোটে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করা হয়। সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত ৩০ জুন ২০২২ খ্রি: তারিখে তার সময়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ১৪১ জন সাধারণ সদস্যের পূর্ণ তালিকা হস্তান্তর করেন।
২৮ এপ্রিল ২০১৪ খ্রি: তারিখে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকারের সময়ে ডা: দীপু মনির দালাল ও চাটুকার হিসেবে স্বীকৃত ডা: পীযূষ কান্তি বড়ুয়াকে মহাপরিচালক বানানোর গোপন মিশন বাস্তবায়ন করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা: দীপু মনির নির্দেশে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এক অফিস আদেশে ডা: পীযূষ কান্তি বড়ুয়াকে অন্যতম সদস্য করে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর অর্ন্তর্বতীকালীন কমিটি গঠন করেন। উক্ত এডহক কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে একটি সাধারণ সদস্য তালিকা চূড়ান্ত করে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আদেশে উল্লেখ করা হয়। উক্ত কমিটির সকল কার্যক্রমে সদস্য হিসেবে ডা: পীযূষ কান্তি বড়ুয়া একক আধিপত্য বিস্তার করে।
উক্ত অর্ন্তর্বতীকালীন কমিটি ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি: তারিখে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ সভায় যেসব স্থায়ী সদস্যরা উপস্থিত থেকে ভোট দিয়ে কার্যকরী পরিষদ কমিটি নির্বাচন করেছে সেসব ১৪১ জন সদস্য থেকে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও বেআইনিভাবে ভিন্ন মত এবং ডানপন্থী একশত ভোটার সদস্যকে বাদ দিয়ে দেয়! পক্ষান্তরে সাহিত্য একাডেমীকে আওয়ামী দোসরদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে মাত্র এক মাসের মধ্যে ৭০ জন নতুন ভোটাধিকার সদস্য চূড়ান্ত করে। যাদের অনেকেই সাহিত্যকর্মের সাথে জড়িত নয়।
অথচ সাহিত্য একাডেমির গঠনতন্ত্রের অধ্যায়- (দুই) অনুযায়ী একজন প্রাথমিক সদস্যকে ভোটাধিকার সদস্য হতে হলে এক বছর সময় লাগে। ধারা ১১(খ) অনুযায়ী “যাহারা সুলেখক বা যাহাদের স্থানীয় ও আঞ্চলিক ভিত্তিতে বা জাতীয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের প্রমাণ বা খ্যাতি রহিয়াছে অথবা যাহার অতীতে যথেষ্ট সাহিত্য সেবামূলক সৃজনশীল কাজকর্মের প্রমাণ রাখিতে সক্ষম হইয়াছেন কেবলমাত্র তাহাদিগকে প্রাথমিক সদস্যে অন্তর্ভুক্তির সর্বশেষ ৩০ দিনের মধ্যেই সাধারণ সদস্যে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দেয়া হইবে।” কিন্তু নতুন তালিকায় এক মাসের মধ্যে অনেক আনখোড়া আওয়ামী দোসরকে তড়িঘড়ি করে সাধারণ সদস্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র চরমভাবে লংঘন হয়েছে। এছাড়া রশিদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে আজীবন সদস্য হওয়া ১৯ জন ভিন্নমত ও ডানপন্থী সদস্যকে তালিকা থেকে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও বেআইনিভাবে বাদ দেওয়া হয়। যাদের অনেকের কাছে আজীবন সদস্যের সনদপত্রও আছে।
এভাবে ১২০ জনের একটি বিতর্কিত ভোটার সদস্য তালিকা প্রস্তুত করে ডা: পীযূষ কান্তি বড়ুয়াকে মহাপরিচালকসহ আওয়ামী দোসর কমিটি করার চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছার পর জুলাই বিপ্লব আন্দোলনের ফলে আর সম্ভব হয়নি।
জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তৈরি করা ১২০ জন বিতর্কিত ভোটার সদস্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশের জেলা প্রশাসক ও সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি নির্বাচনের আয়োজন করে আওয়ামী দোসর ও ফ্যাসিবাদ গুষ্টিকে পূর্ণবাসন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেই ভোটার তালিকায় চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ মামলা, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলার মামলার পলাতক ও জেলখানায় আটক আসামি রয়েছে। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে এবং গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারী বিতর্কিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে।
গঠনতন্ত্রে আছে নির্বাচন করতে গেলে অন্তত দুইমাস পূর্বে নির্বাচন কমিশন গঠনপূর্বক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। অথচ জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ না করে এবং নির্বাচন কমিশন নিয়োগ না দিয়ে গত ১৬ মে ২০২৫ খ্রি: তারিখে অবৈধ ১২০ জনের খসড়া ভোটার তালিকা দিয়ে কার্যকরী কমিটি করার জন্য সাধারণ সভা আহবান করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী লেখক সমাজের আন্দোলনের কারণে তিনি ঐ সভায় নির্বাহী কমিটি গঠন থেকে বিরত থাকেন।
গত ১৬ মে ২০২৫ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সভায় মিজানুর রহমান রানা নামের একজন ভোটার সদস্য গর্ব করে বলেছিলেন তিনি আবেদন না করেই ভোটার হয়েছেন। সাহিত্য সংগঠক ও লেখক জাহাঙ্গীর হোসেন সঙ্গেসঙ্গে এই বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিযোগ করলে তিনি সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। অবৈধ সাধারণ সদস্যদের দিয়ে যে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং গায়েবি ভোটার দিয়ে যে ভোটার তালিকা সৃজন করেছে সেটা প্রমাণের জন্যে এমন অনেক অনিয়ম রয়েছে।
সুতরাং জেলা প্রশাসক ও সাহিত্য একাডেমীর সভাপতিকে ৩৬ জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ের ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশে সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের ২৪ (চ) অনুচ্ছেদ এর প্রদত্ত এখতিয়ার বলে অন্তবর্তী কালীন কমিটির করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অবৈধ ও বিতর্কিত ভোটার তালিকা বাদ দিতে হবে এবং ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বৈষম্যের শিকার সাহিত্য কর্মীদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অন্যথায় অবৈধ ও বেআইনি নির্বাচনের আয়োজন করে সাহিত্য একাডেমীতে আওয়ামী দোসর ফ্যাসিবাদকে পূর্ণবাসন করার বিরুদ্ধে চাঁদপুরের বৈষম্যবিরোধী লেখক সমাজ চাঁদপুরবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে।
স্টাফ রিপোর্টার,১৯ মে ২০২৫