Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির নির্বাচন সম্পন্ন
সাহিত্য

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির নির্বাচন সম্পন্ন

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হলো সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। শনিবার (৩১ মে) জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সম্পন্ন হয় এই ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত। সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কর্মকর্তা, উপস্থিত ভোটার ও প্রার্থীদের সামনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর এর সভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

জানা গেছে, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদ কমিটির সভাপতি পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসক। নির্বাচনে ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২৬জন প্রার্থী। এ দিন ১২৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেন ৯৭জন ভোটার। তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয় কার্যনির্বাহী পরিষদের ১২ জন। উল্লেখ্য, কার্য নির্বাহী পরিষদের ১৫ জন নির্বাচনের কথা থাকলেও ইতিপূর্বে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। যে পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মহাপরিচালক পদ ও দুটি পরিচালক পদ। মহাপরিচালক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন কবি ও লেখক কাদের পলাশ এবং পরিচালক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন পরিচালক (গবেষণা) মুহাম্মদ ফরিদ হাসান এবং পরিচালক (সাহিত্য ও প্রকাশনা) মাইনুল ইসলাম মানিক।

সাহিত্য একাডেমি নির্বাচন কমিশন তথ্য মতে, ১২টি পদে যে সকল প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন, সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনজন প্রার্থী। তারা হলেন আব্দুল্লা হিল কাফী, মোহাম্মদ শাজাহান সিদ্দিকী ও মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৪ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন আব্দুল্লা হিল কাফি।

একটি পরিচালক পদে (গ্রন্থাগার, সেমিনার ও শিশু সাহিত্য) ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হচ্ছেন, ম. নূরে আলম পাটওয়ারী, আশিক বিন রহিম ও এচ এম জাকির। এদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হন আশিক বিন রহিম।

এছাড়াও নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৭ জন প্রার্থী। তাদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ১০জন সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত সদস্যরা হলেন, নুরুন্নাহার মুন্নি (প্রাপ্ত ভোট ৭৮), মোকলেসুর রহমান (প্রাপ্ত ভোট ৭৪), সুমন কুমার দত্ত (প্রাপ্ত ভোট ৭২), মির্জা জাকির (প্রাপ্ত ভোট ৬৯), কবির হোসেন মিজি (প্রাপ্ত ভোট ৬৬), মনিরুজ্জামান বাবলু (প্রাপ্ত ভোট ৫৫), উজ্জ্বল হোসাইন (প্রাপ্ত ভোট ৫৫), মহিউদ্দিন রাসেল (প্রাপ্ত ভোট ৫১), আলামিন (প্রাপ্ত ভোট ৫১) ও নুরুল ইসলাম ফরহাদ (প্রাপ্ত ভোট ৫০)।

সাহিত্য একাডেমি চাঁদপুর এর নির্বাচন পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ এরশাদ উদ্দিন , অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমা, সহকারী কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান সরকার ও সহকারী কমিশনার নাহিদ ইকবাল।

সাহিত্য একাডেমি চাঁদপুর এর ৪০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সাধারণ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলো কার্যনির্বাহী পরিষদ। ভোট দিতে পেরে খুশি নবীন-প্রবীণ সাহিত্যিকরা। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে চাঁদপুরের সাহিত্যাঙ্গন আরো সমৃদ্ধ হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল উপস্থিত সবার।

এদিকে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র করে নবীন-প্রবীণ সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে সকাল থেকে সরব হয়ে উঠে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পার্ক। দীর্ঘ এক যুগ পর ভোটের মাধ্যমে কমিটি নির্বাচনে উৎসবে মেতে উঠে তরুণ ও প্রবীণ লেখকরা। নতুন নেতৃত্বে আগামী দিনে প্রাণবন্ত হবে সাহিত্য একাডেমি প্রত্যাশা সাহিত্যকদের।

নির্বাচন বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, নির্বাচিত এ কমিটি সাহিত্য চর্চা আরো বেগবান করবে। এসময় তিনি নির্বাচন আয়োজনে সাহিত্য একাডেমির সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনে সবার সহযোগিতার বিষয়ে একাডেমির সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

নির্বাচন বিষয়ে সাহিত্য একাডেমি চাঁদপুর এর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সাহিত্য একাডেমি পেলো নতুন নেতৃত্ব। এ কমিটি চাঁদপুরের সাহিত্যাঙ্গনে সমৃদ্ধি আনবে। সাহিত্যের বিস্তৃতি ঘটাতে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে সাহিত্য ছড়িয়ে দিতে হবে বলে জানান তিনি। নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যাবে সাহিত্যে একাডেমি এমনটাই প্রত্যাশা করেন নতুন এই কমিটির কাছে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। সবশেষ কমিটি হয় ২০১৩ সালে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রেখে একটি আনন্দঘন পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে তা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির প্রার্থীরা প্রমাণ দিয়েছে। এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীকে জানাই ধন্যবাদ। আপনারা নির্বাচন উপলক্ষ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এতো প্রচার-প্রচারণা হলেও এক প্রার্থীর সাথে অন্য কোন প্রার্থীর বৈরী সম্পর্ক বা কোন অভিযোগ ছিল না। এতে প্রমাণিত হয় প্রার্থীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ কতটুকু গভীর। আমি আশা করব আপনাদের এই সম্পর্ক বজায় রেখে সকলে একত্রিত হয়ে চাঁদপুরের সাহিত্যকে এগিয়ে নিবেন।

স্টাফ রিপোর্টার, ৩১ মে ২০২৫