চাঁদপুর সদর

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে জনবল সঙ্কট : পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না রোগীরা

চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলার একটি নির্ভরযোগ্য সরকারি চিকিৎসাসেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটিতে শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার উপজেলাগুলো থেকেই নয়, বরং পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, রায়পুরসহ আরো ক’টি জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসার জন্যে আসা-যাওয়া করে। নির্ভরযোগ্য এ হাসপাতালটিতে বর্তমানে জনবল সঙ্কট থাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবার অভাব চলছে।

গত সপ্তাহখানেক ধরে দীর্ঘ সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ হাসপাতালটিতে সপ্তাহের রোববারেই বেশি রোগী চিকিৎসার জন্যে আসে। রোববার থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রচুর রোগীর আগমন হয়। কিন্তু এ হাসপাতালে একদিকে যেমন ডাক্তারসহ অন্যান্য জনবল সঙ্কট, তেমনিভাবে অনেক সিনিয়র ডাক্তার তাদের চেম্বারের রোগীদের সেবা দিয়ে ঠিকমতো চাঁদপুর আড়াইশ শয্যার এ হাসপাতালটিতে রোগী দেখতে আসতে পারেন না। অন্যদিকে আবার কোনো কোনো ডাক্তার আবার থাকেন ছুটিতে, কারো কারো নিজেদেরও অসুখ বিসুখ- স্বাস্থগত সমস্যা, পারিবারিক সমস্যায় তারা হাসপাতালে গড়হাজির থাকেন।

হাসপতালের বিশ্বস্ত একটি সূত্র নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, অনেক সিনিয়র ডাক্তার রয়েছেন, যারা অবহেলা করে হাসপাতালে সময় দেন না, তারা তাদের প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখেন। আবার অনেক ডাক্তার আছেন তারা ঠিকমতো, সময়মতো নিয়মমাফিক রোগী দেখেন। তারা তাদের কর্তব্যকাজে অবহেলা করেন না। এভাবেই দিনের পর দিন তারা ন্যায়নিষ্ঠভাবেই চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কর্তব্যকাজে কোনোরূপ কার্পণ্য করেন না। মহিলা ডাক্তারদের শারীরিক সমস্যা, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সময় দিতে গিয়ে অনেক সময় তারা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না। ওই সূত্রটি আরো জানান, আসলে নারীরা যেহেতু মা, সেহেতু তারা তাদের পারিবারিক কাজে কিছুটা সময় দিতে হয়, মানবিক দিক থেকে এটা তাদের জন্যে অপরিহার্য বিষয়।

জনবল সঙ্কটের বিষয়ে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের কর্মরত পদ ও শূন্য পদে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (চিকিৎসকসহ) মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে ৬৫টি। এর মধ্যে কাগজেকলমে কর্মরত রয়েছেন ৪৮জন চিকিৎসক। যদিও এই চিকিৎসকগণের ৫০%ই নামেমাত্র হাসপাতালে হাজিরা দেন, বাকি ৩০০% ঠিকমতো কাজ করেন এবং ২০% কখনো আসেন আবার কখনো হাসপাতালে আসেন না। এর মধ্যে আবার শূন্য পদ রয়েছে ১৭জনের। ২য় শ্রেণির ১০৪ পদের বিপরীতে কর্মরত ৬৩ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৪১। ৩য় শ্রেণির মঞ্জুরিকৃত পদ ৩৫। এর মধ্যে কর্মরত ২৭। শূন্য পদ ৮। তবে ৪র্থশ্রেণির (আউটসোর্সিং এর মধ্যে ৫৫) পদ সহ মোট মঞ্জুরিকৃত পদ ৮৪। কর্মরত হিসেবে দেখানো হয়েছে সবক’টি পদ। অন্যদিকে ইউনানী শাখায় প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের মঞ্জুরিকৃত পদ ১। কর্মরতও রয়েছেন ওই চিকিৎসক। ৩য় শ্রেণির কর্মচারীর মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ২টি। কাগজে কলমে কর্মরত দু’জনই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদ শূন্য নেই। এসব পদে ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে মোটামুটি সবাই কর্মরত। এর কারণ হিসেবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ পদে যারা কাজ করে, তারা হাসপাতালের কাজের পাশাপাশি হাসপাতালের রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে আয়-রোজগার করে থাকেন- এটা এখন ওপেন সিক্রেট। বিস্তারিত বলতে গেলে, চতুর্থশ্রেণির কর্মচারীদের বেশিরভাগই রোগীদের সেবা দিয়ে নগদ নারায়ণ আয়সহ নানা অজুহাতে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের নিয়ে গিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার নামে মোটা অংকের কমিশন প্রতিদিনই পেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, এদের সাথে অনেক ডাক্তারের চুক্তিপত্র থাকে, রোগীদেরকে বেশি বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেওয়ার।

সবচেয়ে অবাক করার মতো মজার বিষয় হচ্ছে, চাঁদপুর সরকারি এ হাসপাতালটিতে গেলে দেখা যাবে অনেক চতুর্থশ্রেণির নারী-পুরুষ কর্মচারীদের বুকে আইডি কার্ড ঝোলানো। জানা গেছে, এই প্রকৃতির নারী-পুরুষদের অধিকাংশই ওই সরকারি হাসপাতালের সত্যিকারের কোনো কর্মচারী নয়, বরং ডাক্তারদের মনোনীত, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রেরিত রোগীদের দালাল হিসেবেই এরা কাজ করে, শুধু বৈধতার জন্যে এদের গলায় কার্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদেরকে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসন কর্তৃক দালাল অভিযানের সময় যাতে গ্রেফতার করতে না পারে সেজন্যে ওইসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নারী-পুরুষ দালালদেরকে আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে, ডাক্তার-দালাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের নগদ নারায়ণ রোজগারের জন্যে।

 

 আপডেট: ০৫:২৫ অপরাহ্ণ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রোববার

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫

Share