এমনিতেই অবকাঠামো সমস্যা, চিকিৎসক ও জনবলসহ নানা সংকটের মধ্যদিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতাল। সম্প্রতিক সময়য়ে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে যুক্ত হয়েছে মেডিকেল কলেজ ও আইসোলেশন বিভাগ। রোগীর তুলনায় আসন সংখ্যা কম থাকলেও এই দুটি বিভাগকে ছেড়ে দিতে হয়েছে চার তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতাল ভবনের ৪র্থ ও ২য় তলা।
যার ফলে জায়গা সংকুলান এবং আসন সমস্যায় হাসপাতালটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে অস্বাভাবিক হারে।দীর্ঘদিন ধরেই এমনসব নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। আর অস্বাভাবিক রোগীর চাপে কর্মরত চিকিৎসকদের গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়,বিশ্বাব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হাসপাতালটিতে আলাদা আলাদা বিভাগ এবং বিছানা সংকটে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক মাস পূর্বে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ভাবে আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় থাকা পুরুষ ওয়ার্ডটি তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডের একটি অংশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেখানে একপাশে শিশুদের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় এবং অন্য পাশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও দুর্ঘটনা জনিত পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
আগে যেখানে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার পূর্বের পুরুষ ওয়ার্ডে সর্ব মোট ৭২ টি বিছানায় রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হতো। বর্তমানে প্রায় ৪ মাস ধরে তৃতীয় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২৪ টি বিছানাতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে বিছানা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ফ্লোরে বিছানা পেতে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে সরজমিনে দেখা গেছে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় বর্তমানে পুরুষ ওয়ার্ডের নিদিষ্ট বিছানা এবং ফ্লোরে পাতা বিছানা গুলো পরিপূর্ণ হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় এবং কড়িডোরেও অনেক রোগীদের জন্য বিছানা পেতে চিকিৎসা চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আর এই ওয়ার্ড ও বিছানা সংকটের মূল কারণই হচ্ছে হাসপাতালে স্থাপনকৃত আইসোলেশন ওয়ার্ডটি। কারণ দ্বিতীয় তলায় পূর্বের পুরুষ ওয়ার্ডটি এখন হাসপাতালে তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে একপাশে শিশু রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় এবং অন্য পাশে পুরুষ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া আসছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত চার মাস ধরে এভাবে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের রোগীদের বারান্দা এবং করিডোরে ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করায় একদিকে যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা অন্যদিকে হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সদেরকেও অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে।
যদিও হাসপাতালে আলাদা একটি ভবন রয়েছে যেখানে আগে ওই ভবনটিতে আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেই ভবনটি এখন খারি পড়ে আছে। বর্তমানে সেখানে কোনো কার্যক্রম নেই। লোকবল সংকটের কারণে সেই ভবনটিও সাধারণ রোগী ও পুরুষ ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে চাঁদপুর আড়াই’শ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিব-উল-করিম করিম বলেন, হাসপাতালে ৬৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন, ৪৮ জন। ১৩০ জন নার্সের বিপরীতে আছেন ১১৯ জন। ইএমও অর্থাৎ ইমার্জেন্সি মেডিকেল ডাক্তারের মারাত্মক সংকট থাকায় বহিঃবিভাগে রোগী দেখা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসবদের ইনডোরে গিয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে। ফলে টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা ডাক্তারের সাক্ষাত পেতে বিলম্ব হচ্ছোে।
তিনি জানান, সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো হাসপাতালের ৪র্থ তলাটি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জন্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং ২য় তলাটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যে আইসোলেশন ভিভাগ করা হয়েছে। যার ফলে পর্যাপ্ত বেড এবং জায়গা না থাকায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় অবস্থান দীর্ঘ হচ্ছে।
আড়াই’শ শয্যা না পেয়ে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের ফ্লোরে এমনকি বারান্দার শুয়ে-বসে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। উপরোক্ত সমস্যা-সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দফতরে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে। এখানে বিদ্যমান লোক দিয়েই আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। চাঁদপুরসহ ৪০ জেলায় জটিলতার কারণে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বন্ধ রয়েছে।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি,আশিক বিন রহিম,৪ অক্টোবর ২০২০