চাঁদপুরের প্রধানতম সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ৩০৪ পদের মধ্যে ৫৬টি পদই শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে প্রধম শ্রেণির চিকিৎসক সহ ২২টি গুরত্বপূর্ণ পদশূন্য রেখেই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।
প্রতিদিন জেলার এ সরকারি হাসপাতালটিতে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত, শত সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। জনবল সংকটের কারণে একদিকে যেমন রোগীরা চিকিৎসাসেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অন্যদিকে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কারন জনবল সংকট এবং বিভিন্ন গুরত্বপূর্ন পদ শূন্য থাকায়, সব বিষয়ে সঠিক সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। আবার এমনও দেখা গেছে পদ আছে ঠিকই কিন্তু সে পদে কোন লোক নিয়োগ নেই। যেমন বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে হাসপাতালটিতে কোন চক্ষু চিকিৎসক নেই। অথচ এ পদটি ঠিকই মঞ্জুরকৃত পদ হিসেবে রয়েছে।
যেখানে জরুরি বিভাগে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ১৪ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা সেখানে ডিউটি করছেন মাত্র ১০ জন মেডিকেল অফিসার। মেডিকেল অফিসারের বাকি ৪টি পদই শূন্য। অপরদিকে চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে চক্ষু চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেনা সাধারণ রোগীরা।
চাঁদপুরের এই প্রধান স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠানটি সর্বপ্রথমে ৫০ শয্যা বিশিষ্টতা নিয়ে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। তারপর থেকে এটি ৫০ শয্যার জনবল নিয়েই চলতে থাকে। এরপর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর পূর্বে সরকারি এ হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
খবর নিয়ে জানা গেছে ২৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালটি আড়াই,শ শয্যা করা হলেও ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই প্রথমে এর কার্যক্রম চলতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে এটিকে ৫০ শয্যার জনবল থেকে ১,শ, দেড়শ, তারপর ২,শ করে পর্যায়ক্রমে আড়াই,শ শয্যার জনবল করার পরেও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অনেক জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালটির ২৫০,শয্যার জনবলে বিভিন্ন পদে ৩০৪ জন মঞ্জুরকৃত পদ থাকলেও সেখানে বর্তমানে কর্মরত পদে আছেন ২,শ ৪৮ জন। বিভিন্ন পদের বাকি ৫৬টি পদই পদশূন্য রয়েছে।
কর্মরত ২,শ ৪৮টি পদের মধ্যে রয়েছে তত্বাবধায়ক ১ জন, সহকারী পরিচালক ১ জন, সার্জারি, মেডিসিন গাইনি, শিশু,চক্ষু, অর্থোপেডিক্স, চর্ম ও যৌন সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট ৮ জন, একই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও আবাসিক সার্জন ৩ জন। এছাড়াও মেডিকেল অফিসার, সহকারী রেজিষ্টার/সহকারী সার্জন, প্যাথলজিষ্ট, এ্যানেসথেটিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, নাসিং সুপার ভাইজার, হিসাব রক্ষকসহ আরো ২২৪ জন বিভিন্ন পদের কর্মরত আছেন।
হাসপাতাললের বিভিন্ন পদে কর্মরত পদ, ও শূন্য পদের মধ্যে হিসেব করে দেখা গেছে, মঞ্জুরকৃত ৩০৪ টি পদের মধ্যে বর্তমানে ২,শ ৪৮ জন কর্মরত আছেন এবং বাকি যে ৫৬ টি পদ শূন্য রয়েছে তার মধ্যে প্রথম শ্রেণির ২২ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য। বিভিন্ন পদে বাকি ৩৪ টি পদ শূন্য রয়েছে।
যার কারনে জেলার এই প্রধানতম আড়াই,শ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে বেগাতে পড়তে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতালের দায়িত্বরত ক,জন চিকিৎসক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের কাছে জানা যায়, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালটির শূন্য পদে চিকিৎসক এবং লোকবল নিয়োগ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ও স্বস্থ্য মন্ত্রনালয়ে লিখিত আবেদন করা হলেও আজো তা কার্যকর হয়নি।
হাসপাতালটিতে ৩০৪ টি পদের মধ্যে ৫৬ টি শূন্য পদগুলোতে এখনো পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে হাসপতালে সেবা নিতে গিয়ে চরম দুভোর্গে পড়তে হয় রোগীদের। একই সাথে বিভিন্ন রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে নানা সমস্যা পোহাতে হয় কর্তৃপক্ষের ।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আসিবুল আহসান চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘হাসপাতালের যেসকল পদ গুলো শূন্য রয়েছে, সে পদ গুলোতে লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য আমরা বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু আজো তা কার্যক্রর হয়নি। একদিকে যেমন হাসপাতালে অনেক লোকবল সংকট রয়েছে অন্যদিকে দেখা গেছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হওয়ার পর অনেকের পদন্নতি হওয়ায় তাদের সে পদেও নতুন করে কোন লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এরমধ্যে আবার ৫৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আবারো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করবো।’
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০