চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্যোগে উৎসবমূখর আয়োজনে এই প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী ফল উৎসব। গ্রীষ্মকালীন দেশীয় ফলের সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করা এবং বিলুপ্ত প্রায় দেশী ফলবৃক্ষ সংরক্ষণের লক্ষে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়। ফল উৎসবে ৪৩ রকমেরর বাহারি ফলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে কলেজের শিক্ষার্থীদের।
১২ জুন রোববার সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গনে ফিতা কেটে আয়েজিত উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ -এর সভাপতিত্বে এবং সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বাহারের পরিচালনায় অমন্ত্রিত
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মাসুদুর রহমান, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস সহ কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
ফল উৎসবে বিভাগ ভিত্তিক স্টলে সজ্জিত করা হয় প্রায় ৪৩ রকমের বিভিন্ন প্রজাতীর দেশীয় ফল। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথিরা স্টলগুল পরিদর্শন করেন। পরে ২ হাজারের বেশি অতিথি এবং শিক্ষার্থীদের দেশীয় খাওয়ানো হয়। এছাড়াএ উৎসব চলাকালীন সময়ে কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
বিভাগ ও ফলের তালিকা ছিল- বাংলা বিভাগ: বেতুন, বৈঁচি, বেলুম্ব, কাঠ বাদাম ও তালের শাঁস। ইংরেজি বিভাগ: আনার ও ডালিম। ইতিহাস বিভাগ: পেঁপে। সমাজকল্যাণ বিভাগ: কামরাঙ্গা, জাম্বুরা ও বেল। অর্থনীতি বিভাগ: কলা, ডাব ও নারিকেল। পদার্থবিদ্যা বিভাগ: তরমুজ। প্রাণিবিদ্যা বিভাগ: আমলকি, অড়বরই, বহেরা ও হরিতকি। রসায়ন বিভাগ: লটকন ও গাব। ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিভাগ: ডেউয়া ও কাউ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ: জাম ও সফেদা। দর্শন বিভাগ: নুইন্যা, করমচা ও গুটি জাম। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ: জামরুল, ডুমুর, দেশি খেজুর। ব্যবস্থাপনা বিভাগ: আম। হিসাববিজ্ঞান বিভাগ: লিচু ও পেয়ারা। গণিত বিভাগ: কাঠাল। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ: আনারস, ছাগলনাদি, আমড়া, বুতিজাম, জগডুমুর। ভূগোল বিভাগ: চালতা, তেঁতুল ও লেবু।
ফল উৎসবের উদ্বোধকের বক্তব্যে পৌরমেয়র মো. জিল্লুর রহমান বলেন, মধুমাসে চাঁদপুর সরকারি কলেজের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। উৎসবে এসে ফলের যে সংগ্রহ দেখলাম তা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সংগ্রহীত ফলগুলোর সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত থাকলেও এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে অনেক ফল আমাদের খাওয়ারও সুযোগ হয়নি। চাঁদপুর সরকারি কলেজ এখনো জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ। ফল উৎসবের এমন আয়োজন অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনুসরণ করবে এবং এসব ফলের সংরক্ষণের চেষ্টা করবে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ উৎসব সম্পর্কে বলেন, আমাদের এই ফল উৎসবের লক্ষ হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে দেশীয় ফলের সাথে পরিচিত করা এবং সরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ। আমরা জানি দেশে অনেক ফল রয়েছে এবং অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। আজকের আয়োজনে প্রায় ৪০টির বেশী ফল সংগ্রহ করে উপস্থাপন করা হয়েছে এসব ফলের মধ্যে অনেক দেশীয় ফল নতুন প্রজন্ম চিনেই না এবং বিলুপ্তির পথে। ওইসব ফলগুলো কিভাবে আবার সংরক্ষণ করে আমরা উৎপাদনে যেতে পারি সে বিষয়ে উৎসাহ দেয়াই আমাদের লক্ষ।
তিনি আরো বলেন, আজকের আয়োজনের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে কারিকুল্যামের পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া। কারণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় নিজেরা হাতে কাজ করতে অভ্যস্ত না। ফল কিভাবে সংরক্ষণ, আবহাওয়া ও পরিস্থিতি অনুকুলে রেখে স্বাস্থ সম্মতভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা শিক্ষার্থীদেরকে আলাদা একটি কক্ষে হাতে কলমে শেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১২ জুন ২০২২