Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের ডাক্তার একই সূত্রে গাঁথা
চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের ডাক্তার একই সূত্রে গাঁথা

চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের ডাক্তার একই সূত্রে গাঁথা

Rana new on

মিজানুর রহমান রানা  ||  আপডেট: ০৫:৪৩ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার

চাঁদপুর আড়াইশ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতাল আর বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তাররা একই সূত্রে রয়েছে। যেসব ডাক্তার এ হাসপাতালে কর্মরত, পাশাপাশি তাদের নিজেদেরও একেকজনের একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অথবা প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায়ই অনেক ডাক্তার এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে অথবা জরুরি অপারেশনের জন্যে রোগীদের রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিষয়টি কেউ কেউ মামুলি বিষয় ভাবলেও প্রকৃত অর্থে এসব ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে চাকুরিই করেন ওইসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী প্রেরণের জন্যে। এসব রোগীর কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ কওে আঙ্গুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ বনে যাচ্ছে কেউ। এ শহরে এটাই এখন ওপেন সিক্রেট।

এক জরিপে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অধিকাংশই শহরের নামকরা ডাক্তার, যাদের বেশিরভাগেরই চাকুরি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। এসব ডাক্তারের নাম উল্লেখ করতে গেলে বা বাছতে গেলে যে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে!

তবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলছে এক অভিনব প্রতারণা। অনুসন্ধানে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। এর মধ্যে চাঁদপুর স্টেডিয়াম রোডের আল কারীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার অন্যতম। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখেন ডা. রকিউর রহমান ও শারমীন আক্তার। মজার বিষয় হচ্ছে ডা. সামছুন নাহার বিগত কয়েক বছর আগে মারা গেলেও ওই ডাক্তারের নাম বিক্রি করে শারমীন আক্তারই রোগী দেখেন। আর ওই শারমীন আক্তার মৃত সামছুন নাহারের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করে রোগী দেখে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

জানা যায়, ডা. শারমীন আক্তার সরকারি ডাক্তার হয়েও ঠিকমতো হাসপাতালে ডিউটি করেন না ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখার জন্যে। আরো মজার বিষয় হচ্ছে, স্টেডিয়াম রোডের ওই আল কারীম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মনসুর মাঝে মাঝে নিজেই ডাক্তার সেজে রোগী দেখেন, ইনজেকশন, স্যালাইন রোগীকে পুশ করেন। এছাড়াও তার চেম্বারে রয়েছে লাইসেন্সবিহীন একটি ঔষধের ফার্মেসী। শুধু তাই নয়, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ল্যাব টেকনিশিয়ান থেকে অন্যান্য কোনো জনবল নেই। মালিকের মেয়েকে দিয়েই ইচ্ছেমতো চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ কারবার।

এরাই রাতের বেলায় মিলিত হন, এদের পরিকল্পনায়ই শহরে অনেককিছু ঘটে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে মাঝে মাঝে যখন কিছু কিছু প্রকাশ হয়ে যায় যা মানুষকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। এসব ডাক্তার যখন চাঁদপুর শহরে প্রবেশ করেছেন, আদতে তাদের কিছুই ছিলো না। আজ তারা খুব অল্প সময়েই বনে গেছেন বিশাল ইমারত, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট হাসপাতাল ও অট্টালিকার মালিক। কেউ নিজের নামে, কেউ স্ত্রী-সন্তানের নামে আবার কেউ বা শ্বশুরশাশুড়ির নামেও কিনে রেখেছেন জায়গা সম্পত্তি। কিন্তু প্রশ্ন এখন সাধারণ ডাক্তার যখন বৈধভাবে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চাকুরি করে নিজেই ভাড়া থাকেন অন্যের বাড়িতে তখন অন্য কিছু কিছু ডাক্তার কোথা থেকে কোন্ যাদুবলে এসবের মালিক বনে যাচ্ছেন? প্রশ্নটা আপনার কাছেই, শুধু অনুসন্ধানে মিলবে উত্তর।

এদিকে ডাক্তাররা যেমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেন অন্যদিকে আবার অনেক সময় উল্টোটাও ঘটে থাকে। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরাও ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণ করেন। ওইসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের ইচ্ছেমতোই ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন, রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা বেশি বেশি দিয়ে থাকেন। নামসর্বস্ব ও লোকবল বা জনবলহীন এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার চাঁদপুর স্বাস্থ্য বিভাগ তথা সিভিল সার্জন অফিসের কিছু কর্মচারীর সহযোগিতায় গড়ে ওঠে। এদের সহযোগিতায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঢাকা থেকে কাগজপত্র তৈরি করে নেয়।

শুধু তাই নয়, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো পর্যাপ্ত কাজের জন্যে জনবল। নিজেই মালিক আবার নিজের সন্তানরাই ল্যাব টেকনিশয়ান বা নিজেই অনেক সময় ল্যাব টেকনিশিয়ানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রোগীকে নিজেদের ইচ্ছেমতোভাবে রোগ নির্ণয় করেন। সোজাসাফটা বলতে গেলে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলে দেন কোন রোগীর কী সমস্যা, আর ডাক্তারও সেটাই প্রকাশ করে থাকেন। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের থাকে এক ধরনের পালিত কমিশনপ্রাপ্ত দালাল বাহিনী। এরাই বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীদের ফুসলিয়ে নিয়ে আসে এসব নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা রোগীরা না বুঝতে পেরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, দালাল ও ডাক্তারদের কারসাজিতে পরিণত হয় ‘কোরবানির পশু’তে।

যদিও এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের। তারা তাদের কর্মকান্ড পরিচালিত করে নিজেদের সময় সুযোগ মতো। ফলে নামসর্বস্ব এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিরাপদেই দিনের পর দিন চালিয়ে যায় তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

বালককে বলাৎকার : মাদরাসা শিক্ষক গ্রেফতার সংবাদটি পড়তে ক্লিক করুন