চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও বিজয় টিভির স্টাফ রিপোর্টার এবং দৈনিক চাঁদপুর খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদীর জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে তাঁর ভাবনা।
তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষাকেও সমানতালে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন। তাঁর এলাকার বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে শাহতলী কামিল মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি এবং জিলানী চিশতী কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান।
জেলা ব্র্যান্ডিং নিয়ে স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন তিনি। চাঁদপুর টাইমস পাঠকদের জন্য তা’ তুলে ধরা হলো।
সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম চাঁদপুর জেলাকে সিঙ্গাপুরের আদলে ব্র্যান্ডিং করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলাকে ব্র্যান্ডিং জেলা ঘোষণা করায় আমি প্রথমেই সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে চাঁদপুরকে সিঙ্গাপুরের আদলে দেখতে পাওয়া চাঁদপুর জেলাবাসীর জন্য অনেক বড় সুযোগ। এ সুযোগ আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। জেলা ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে সহ-সভাপতি হওয়ার সুবাদে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটির একজন সদস্য হিসেবে শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলা পর্যায়ের প্রায় সবক’টি সভায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। ভূমিকা রাখারও সুযোগ হয়েছে।
সোহেল রুশদী বলেন, আমি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন চাঁদপুর প্রেসক্লাবে জেলা ব্র্যান্ডিং সফল করতে স্বপ্ন মেলার আয়োজন করেছি। চাঁদপুরের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে স্বপ্ন মেলা অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে সাংবাদিকরা বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। মোদ্দা কথা, জেলা ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে চাঁদপুর প্রেসক্লাব এবং চাঁদপুরের সাংবাদিকদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিলো এবং এখনো রয়েছে।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের নেতৃত্বে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি, উপজেলা কমিটি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, চাঁদপুর পৌরসভা, চাঁদপুর প্রেসক্লাব এবং চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে চাঁদপুরকে এগিয়ে নিতে অনেক ইনোভেশন কাজ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে।
বিশেষ করে ইলিশ মেলা একটি চাঁদপুরে এবং অপরটি ঢাকা বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টার-২-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা কিনা চাঁদপুরের ইতিহাসে সেরা সফল প্রোগ্রাম। জেলা ব্র্যান্ডিং ফেস্টিভ্যালে একটি তথ্য সমৃদ্ধ ব্যয়বহুল স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে। স্মরণিকায় চাঁদপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। ব্র্যান্ডিংয়ের এ অনুষ্ঠানে সরকারের পূর্ণ সমর্থন পাওয়া গেছে। আশা করছি, জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে চাঁদপুর দেশের শ্রেষ্ঠ জেলার স্বীকৃতি পাবে। এতে করে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটবে। চাঁদপুরের ব্যাপক উন্নয়ন হবে এবং চাঁদপুর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে চাঁদপুর। সেই সাথে ব্যাপক কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এজন্যে বলবো, দলমত নির্বিশেষে জেলা ব্র্যান্ডিং চাঁদপুর বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’ (ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর)। ইলিশের খ্যাতি ব্যতীত চাঁদপুরের এমন আর কী কী খ্যাতি আছে, যা ব্র্যান্ডিং সহায়ক হতে পারে এ সম্পর্কে সোহেল রুশদী বলেন, ‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’ (ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর) ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্যে আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, জেলা শহর ও উপজেলা শহরগুলোতে প্রবেশ পথ, সড়ক, মহাসড়ক এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, দোকানপাটে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ লোগোটি লাগিয়ে রাখতে হবে। এ জেলার বাইরের অথবা বিদেশের যে কেউ চাঁদপুর জেলায় প্রবেশ করতেই যেনো ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ লোগোটি দেখতে পায়। সম্প্রতি এ প্রস্তাবটি বড়স্টেশন মোলহেডে শাহতলী জিলানী চিশতী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফরের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলকে আমি দিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক সেটি গ্রহণ করেছেন।
তার মতে, চাঁদপুর জেলায় আরো অনেক খ্যাতি রয়েছে, যা কিনা ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আসতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে হাজীগঞ্জের ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, বড় স্টেশন মোলহেড, ফরিদগঞ্জের আউয়ালের মিষ্টি, মতলবের ক্ষীর, কচুয়ার প্যারা সন্দেশ, যা ইতিহাস ও ঐতিহ্যেও স্থান পেয়েছে। তথাপিও শুধুমাত্র ইলিশকে ব্র্যান্ডিংয়ের প্রধান পণ্য হিসেবে এগিয়ে নিলে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে চাঁদপুর দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া সম্ভব হবে। চাঁদপুর সারা বিশ্বে আরো বেশি সমাদৃত হবে।
জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অন্তরায় হবে এমন দু’টো সমস্যার কথা এবং করণীয় সম্পর্কে রুশদী জানান, জেলা ব্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো শহরের যানজট এবং অপ্রশস্ত রাস্তা-ঘাট। সেই সাথে রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা এবং যত্রতত্র ময়লার স্তুপ রাখা, যা কিনা একটি শহরের নাগরিক দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে করণীয় হলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শহরের রাস্তা-ঘাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে একাধিক ওয়ানওয়ে সৃষ্টি করা, রাস্তা প্রশস্ত করা এবং ব্যাপক সংস্কার করা, রাস্তাার দ’ু পাশে হাঁটাচলার ব্যবস্থা রাখা, দু’পাশে ফুলের বাগান করা। ‘ক্লিন চাঁদপুর, গ্রিন চাঁদপুর’ সফল বাস্তবায়ন হলে এমনিতে চাঁদপুর শহরকে পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
চাঁদপুর শহর ও জেলাকে মডেল হিসেবে তাঁর মতমত, আমি চাঁদপুর শহরকে সুন্দর, যানজটমুক্ত, নাগরিকদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতসহ আধুনিক শহর হিসেবে দেখতে চাই। চাঁদপুরকে পর্যটন নগরী ও দেশের বিখ্যাত পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আদলে চাঁদপুরকে দেখতে চাই, দূষণমুক্ত শহর হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে নাগরিকরা মুক্ত নিঃশ্বাস নিয়ে চলাফেরা করতে পারবে। নাগরিকগণের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকবে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকবে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিয়ে শতভাগ মুক্ত জেলা দেখতে চাই। এ ছাড়াও ‘ক্লিন চাঁদপুর গ্রিন চাঁদপুর’-এর শতভাগ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। চাঁদপুরকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেখতে চাই।
চাঁদপুর জেলায় পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কে সোহেল রুশদী বলেন, পর্যটন সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে চাঁদপুর জেলা শহরকে নিয়ে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শহরের রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, রাস্তার আমূল সংস্কার, নতুন রাস্তা তৈরি করা, একাধিক ওয়ানওয়ে রোড তৈরি করা ও রাস্তার দ’ুপাশে ফুলের বাগান তৈরি করতে হবে। ইলিশের রাজধানী খ্যাত বিশেষ করে শুধুমাত্র চাঁদপুর বড় স্টেশন, ইলিশ মাছ ঘাট, মোলহেড, তিন নদীর মিলনস্থল এবং ডাকাতিয়া নদীর দু’পাড়কে সৌন্দর্যমন্ডিত করে পর্যটন এলাকায় রূপান্তর করতে হবে।
জেলা ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে সোহেল রুশদীর বিশেষ পরামর্শ হলে, জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে চাঁদপুরকে এগিয়ে নিতে চাঁদপুরবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরকে ঘিরে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে চাঁদপুরের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে হবে। ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে জনগণকে ব্যাপক ধারণা দিতে হবে।
তিনি বলেন, জনসাধারণকে জানতে হবে ব্র্যান্ডিং কী। ব্র্যান্ডিংয়ের সফল বাস্তবায়ন হলে চাঁদপুর জেলার কী কী সুবিধা জনসাধারণ পাবে, জেলায় কী কী উন্নয়ন ঘটবে, পর্যটন শিল্পে কী ধরনের বিকাশ ঘটবে, অর্থনৈতিকভাবে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটবে চাঁদপুরে, কী ধরনের কর্মসংস্থান ঘটবে তার ব্যাপক জানান দিতে হবে। আমার সবিনয় প্রস্তু হচ্ছে। ব্র্যান্ডিং নিয়ে জেলা পর্যায়ের নিয়মিত সভার পাশাপাশি জনমত তৈরির জন্যে মাঠ পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, স্কুল-কলেজে কর্মশালার আয়োজন করা হোক। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলে এটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
নিউজ ডেস্ক
।। আপডটে,বাংলাদশে সময় ০৯ : ২০ পিএম, ০২ মার্চ ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ