চাঁদপুর শহরে হঠাৎ অটোরিক্সার ভাড়া বৃদ্ধির কারনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। এ নিয়ে প্রতিনয়িতই যাত্রী ও চালকদের সাথে বাক-বিতন্ডা, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। পূর্বে যেখানে ভাড়া ছিল ৫-১০ টাকা সেখানে দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার চালকরা।
এদের একক সিদ্ধান্তের কারনে যাত্রীরা প্রতিনিয়তই চালকদের হাতে হেনস্থা হচ্ছে। অতিরিক্তি ভাড়া প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলে প্রায়ই চালকদের সাথে যাত্রীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে।
বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ অবগত হলে শহরে মাইকিং করে মালিক সমিতির প্রদত্ত ভাড়ার তালিকানুযায়ী ভাড়া আদায় স্থাগিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং এ বিষয়ে মালিকদেরকে একটি জরুরী চিঠি দিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় পৌর কার্যালয়ে হাজির হয়ে একটি জরুরী সভার ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়ার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমরা মালিকদেরকে জানিয়েছি প্রতিটি গাড়িতে আপনারা যে তালিকাটি লাগিয়েছেন তা আগে অপসারণ করা হোক। জেলা প্রশাসন থেকে ভাড়া সংক্রান্ত ব্যাপারে একটি কমিটি রয়েছে তাদেরকে নিয়ে বসে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর পূর্বে আপনারা আগের নিয়ম মেনেই চলেতে হবে।
জানা যায়, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অটোরিক্সার নিতিমালা ও ভাড়া নির্ধারণ সম্পর্কে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। সে কমিটি যাচাই বাচাই ও বিভিন্ন পর্যালোচনা করে পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালে ২০১৩ সালে পৌর মেয়রের স্বাক্ষরিত একটি ভাড়ার তালিকা সকল অটো রিক্সার মালিক ও চালকদের দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী অদ্য পর্যন্ত চাঁদপুরে ভাড়া নির্ধারণ রয়েছে।
হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে মালিকদের পক্ষ থেকে ভাড়ার তালিকা পূর্বের চাইতে দ্বিগুন করে একটি তালিকা তৈরি করে চালকদেরকে দেওয়া হয়। যা তারা নিজ নিজ গাড়িতে লাগিয়ে রাখে। কোন যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে হট্টগোল করলে তখন তারা ওই তালিকাটি দেখায়। তা নিয়েও যাত্রী ও চালকদের মাঝে প্রতিনিয়ত ঝগড়া ও হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে।
যাত্রীরা জানায়- পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই অটো রিক্সা শহরে চলাচল করে। কিন্তু এই তালিকাটি পৌর কর্তৃপক্ষের নয়। চালকদের নিজস্ব বানানো। এ তালিকানুযায়ী তারা দেবে না।
এ বিষয়ে মালিক সমিতির উপদেষ্টা তাফাজ্জল হোসেন (তাফু) পাটওয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা মালিকরা বর্তমানে এই অটো রিক্সা পরিচালনা করে কেহই ভালো অবস্থায় নেই। আমাদেরকে প্রতিনিয়তই লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ প্রথমে এ অটো রিক্সার লাইসেন্স ছিলো ১৫শ’ টাকা, তারপর করা হয় ২২ শ’ টাকা এবং পরে ৯ হাজার টাকা। সবশেষ তা বৃদ্ধি করে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে করে মালিকদের “মরার উপর খড়ার গা” সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তখন মালিকরা নিরুপায় হয়ে মেয়রের কাছে বিষয়টি অবগত করার জন্য হাজির হয়ে লাইসেন্স ফি কমানোর জন্য বিভিন্ন দিক তুলে ধরলে তিনি তখন তা কমিয়ে ১৭ হাজার টাকা করেন।’
তার দাবি, ‘অধিক বিদ্যুৎ বিল, গ্রেজ ভাড়া, যন্ত্রাংস বাবদ খরচ এবং প্রতিদিন রাস্তায় একটি গাড়িকে ১০ টাকা করে বছরে ৩৬শ’ টাকা পৌর কর্তৃপক্ষকে দিতে হয় তাই মালিকদের এখন আর পোষায় না এ জন্য আমরা বেঁচে থাকার জন্য এই ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া তালিকাটি টানানো মালিকদের ঠিক হয়নি। গতকালের পৌর কর্তৃপক্ষের মিটিংয়ে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। তারা বলেছেন তাদের কমিটি বিষয়টি বিবেচনা করে মেয়রকে জানাবেন। তারপরই ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে অটোরিক্সা মালিক সমিতির একটি কমিটি ছিলো। তা তখন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সমবায়ের মাধ্যমে একটি আহŸায়ক কমিটি করা হয়। এ কমিটির আহŸায়ক হলেন নাছির এবং সদস্য সচিব আবু তাহের ও আলমগীর ঢালী এবং পূর্বের কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহ ৪ জনকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। তারা মালিক ও চালকদের সুখে দুঃখে পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা যে তালিকাটি এরই মধ্যে গাড়িতে লাগিয়েছি তা আজ থেকে মাইকিং করে সরিয়ে ফেলার জন্য সকল চালকদের জানিয়ে দিবো। এখন থেকে ভাড়া নিয়ে আর যাত্রীদের কোন বিভ্রান্ত হতে হবে না। পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই নিয়ম মেনে পরবর্তীতে ভাড়ার তালিকা জানিয়ে দেওয়া হবে।
অপর দিকে এসব পরিবহন চালকদের প্রতিষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা এবং যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড বসিয়ে শহরে জানজটের সৃষ্টি করছে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরধারি বৃদ্ধি করার জন্য যাত্রী সাধারণ জোর দাবি জানিয়েছেন।
শরীফুল ইসলাম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৯ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ