চাঁদপুর শহরে হকারদের মাইকিংয়ে বাড়ছে শব্দ দূষণ

চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হকারদের মাইকিং যেন এখন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোন পণ্য বা মালামাল বিক্রির জন্য শহরের বিভিন্নস্থানে তারা অবিরাম মাইকিং করে বেড়াচ্ছেন। আর তাতেই শহরের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে অসহনীয় শব্দ দূষণে। শুধু শহর জুড়েই নয়, যেকোন জিনিস বিক্রির ক্ষেত্রে মাইকিং করার এমন দৃশ্য এখন গ্রামঞ্চলেও দেখা যায়।

বর্তমানে সময়ে ভাসমান ব্যবসায়ী ও হকাররা যেকোন কাঁচামাল, পেঁয়াজ, রসুন, আঁধা, প্লাসিট সামগ্রী, হলুদ, মরিচ, লেবু, আম, জাম, কাঁঠালসহ যেকোন পন্য বিক্রি করতে মাইকিং যেন্র এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর দিনভর এমন মাইকিংয়ের শব্দ দূষণে ক্ষতির মুখে পড়ছে, হাসপাতাল কিংবা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে থাকা রোগী, শিশু এবং বয়োবৃদ্ধরা। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদে নামাজরত অবস্থায় এমন মাইকিংয়ে বিরক্ত হচ্ছেন মুসল্লিরাও। রাস্তাঘাটে চলার পথে ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিশুরাও। এমনকি পথচারীরাও মোবাইলে কথা বলার সময় মাইকিংয়ের শব্দে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

গম কয়েক বছর আগেও এমন অবস্থা ছিল না। তখন হকাররা নিজেদের কণ্ঠেই ক্রেতাদের ডাকতেন, পণ্য বিক্রির জন্য মাইক হাতে নিতেন না। কিন্তু সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রায় প্রতিটি হকারই মাইকিংকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

বিগত বছর গুলোতে সরজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের পাল বাজারের সামনে, পৌরসভা, হাসপাতালের সামনে, কালী বাড়ি, রেলওয়ে হর্কাস মার্কেটের সামনে, বাসস্ট্যান্ড, ছায়াবাণী, চিত্রলেখা মোড়, মিশন রোড, নতুন বাজার, পালপাড়া, নাজির পাড়া, প্রফেসর পাড়া, মমিন পাড়া, চেয়ারম্যানঘাটাসহ শহরের ব্যস্ততম ও জনবহুল স্থানে এই হকারদের মাইকিং এখন সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। মাইক ছাড়া যেনো কোন পন্যই বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের কাছে।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই লাগাতার মাইকিংয়ে শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে, অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষদের বিশ্রামে বিঘ্ন ঘটছে, এমনকি অনলাইনে কাজ করা মানুষও সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত শব্দ দূষণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।

সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, হকারদের জীবিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শহরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারাও রক্ষা করা জরুরি। তাই নিয়ন্ত্রিত সময়ে ও সীমিত মাত্রায় মাইকিং করার বিধি চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একইসাথে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, শহরের আবাসিক এলাকায় কতটুকু শব্দ হওয়া উচিত, তার একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড পরিবেশ আইনেই উল্লেখ আছে। সেই সীমা অতিক্রম করলেই তা শব্দ দূষণ হিসেবে গণ্য হবে। হকারদের মাইক ব্যবহার করে অবিরাম প্রচারণা শুধু বিরক্তিকরই নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যঝুঁকিরও কারণ। বিশেষ করে হৃদরোগী, বয়স্ক মানুষ, ছোট শিশু ও শিক্ষার্থীরা এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে। অনেক সময় অতিরিক্ত শব্দে মানুষের মানসিক চাপ বাড়ে, অনিদ্রা দেখা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিও তৈরি হয়।

তিনি বলেন, আমরা চাই মানুষ এ বিষয়ে সচেতন হোক। প্রয়োজনে আমরা ক্যাম্পেইন, সেমিনার কিংবা বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও হকারদের বোঝাতে পারি। পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করে তাদের সচেতন করকে পারি যে কোনটি গ্রহণযোগ্য আর কোনটি ক্ষতিকর।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি/ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫