চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকায় ইকবাল মুন্সি নামের এক প্রবাসীর চরম হেয়ালীপনা ও গাফিলতিতে বার বার হাইভোল্টিসের বৈদ্যুতিক তারে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এতে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ নির্মাণ শ্রমিকরা।
আর শ্রমিকদের এমন মৃত্যুতে বাড়ির মালিক প্রবাসী ইকবাল মুন্সি কয়েক হাজার কিংবা লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েই বার বার পার পেয়ে যাচ্ছেন। তারপরেও তিনি ওই হাইভোল্টিসের বৈদ্যুতিক তারের এবং খুঁটির কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।এমনকি কোন প্রকার সাপেটিং ছাড়াই তিনি তার ভবনের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, এর পূর্বেও এই ভবনে নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে দেড় দুই বছরে আরো দুজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এভাবেই একের পর এক প্রবাসী ইকবাল মুন্সির ভবনে গড়ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের দুর্ঘটনা। এতে নিহত হচ্ছে নীরিহ নির্মাণ শ্রমিক।
জানা গেছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সোয়া ৫ টায় ওয়ারলেস সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন প্রবাসী ইকবাল মুন্সির নবনির্মিত ভবনে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইমরান (২৩) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের করুন মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর খবর শুনেই লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান ঠিকাদার নান্নু ও তার অন্যান্য শ্রমিকরা। একই সাথে ঘটনার পর পরই ভবনের মালিক প্রবাসী ইকবাল মুন্সী তার ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়ে সে ওই এলাকা থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে ঠিকাদারের লোকজন হাসপাতালে নিহত ইমরানের লাশ রেখে পালিয়ে যাওয়ার কারণে অজ্ঞাত হিসেবেই এক রাত্র হাসপাতালে লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎস্পষ্টে নিহতের বিষয়টি চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করলে থানার এস আই মোঃ কবির হোসেন লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠান।
ঘটনার দিন রাতে সরজমিনে গিয়ে খবর নিয়ে জানা যায়, ভবনের মালিক ইকবাল মুন্সি নির্মাণ শ্রমিক ইমরানের মৃত্যুর খবর শুনেই তার নির্মাধানীন বাড়িতে তালা লাগিয়ে নানুপুর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় ওই বাড়ির প্রধান গেটে তিনি তালা আটকিয়ে তিনি পালিয়ে রয়েছেন।
এরপর পর্যায়ক্রমে তার আত্মীয় স্বজনের বাড়ি এবং তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে ঐদিন রাতেই ইকবাল মুন্সি বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় এয়ারপোর্টের চলে যান এবং পরের দিন সকাল নয়টার ফ্লাইটে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। যার কারণে এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
১৭ সেপ্টেম্বর নিহত নির্মাণ শ্রমিক ইমরান হোসেন ময়মনসিংহ জেলার বালাগাঁও থানার তারাকান্দা গ্রামের জামাল মন্ডলের ছেলে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার এস আই মোঃ কবির হোসেন জানান, বিদ্যুৎস্পষ্টে ইমরান হোসেন নামের নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল কতৃপক্ষ থানায় অবগত করলে ওসির স্যারের নির্দেশে হাসপাতালে গিয়ে লাশের সুরুতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবেই লাশটি হাসপাতাল পড়ে রয়েছিলো। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ির মালিক এবং ঠিকাদার কাউকেই পাওয়া যায়নি। সেই বাড়িতে তালা লাগানো দেখতে পাই।
পরবর্তীতে অন্য শ্রমিকের মাধ্যমে আমরা তার পরিচয় জানতে পারি। এ বিষয়ে যদি নিহতের পরিবার কোন মামলা করে, তাহলে আমরা মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিব এবং ময়না তদন্ত শেষে লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি,২০ সেপ্টেম্বর ২০২২