পুলিশ প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পরেও চাঁদপুরে বন্ধ হয়নি কিশোর গ্যাংদের আধিপত্য। উল্টো দিন যতই যাচ্ছে, ততই যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ও তৎপরতা। চাঁদপুর শহরের প্রতিটি এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে স্কুল-কলেজ পড়ৃয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মহলে।
সবশেষ ২৫ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয় কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান (১৮)। গুরুতর আহত এ শিক্ষার্থী বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মেহেদি চাঁদপুর শহরের টেকনিক্যাল মাদ্রাসা রোড় এলাকার খান বাড়ি শাহাদাত খানের পুত্র। সে হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
আহত মেহেদী জানায়, গত ২৩ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে মাশরাফি নামে স্থানীয় এক কিশোর ইভটিজিং করে। ইভটিজিংয়ে বাঁধা দেয়ায় মাশরাফির সাথে তার তর্ক বাঁধে। এই ঘটনার ক্ষিপ্ত হয়ে মাশরাফি নামের ওই যুবক দলবল নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে হামলা করে তাকে তুলে আনতে যায়। এসময় তাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় দ্বন্দ্ব বাঁধে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় দিকে টেকনিক্যাল স্কুলের সামনে মেহেদীকে একা পেয়ে মাশরাফির নেতৃত্বে ১০/১৫ জন কিশোর গ্যাং হামলা করে। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেহেদীর বুকে ও হাতে কুপিয়ে জখম করে ফেলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, কিশোর মেহেদীর বুকে ও হাতে ১২টি সেলাই করা হয়েছে। তবে বুকের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের বিপদ থেকে সে রক্ষা পেয়েছে। বর্তমানে তাকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ভর্তি দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মেহেদীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে এ প্রতিবেদককে জানানো হয়।
এর আগে ২৩ জানুয়ারি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পিছনের খেলাধুলা করে বাড়ি ফেরার পথে নায়েব (১৯) নামে এক ছাত্রকে কুপিয়ো রক্তাক্ত করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করতে সক্ষম হয়। তবে আহতর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা বা লিখিত অভিযোগ না করায় মুচলেখার মাধ্যমে তারা ছাড়া পেয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদপুর শহরের প্রতিটি পড়া মহল্লায় অলিগলিতে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক গ্র“প অপর গ্রুপের সঙ্গে প্রকাশ্যে মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। হরহামেশা নিরীহ শিক্ষার্থীদের জিম্মি এবং গায়ে পড়ে হয়রানি ও মারধর করা হচ্ছে। এ কারণে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কায় রয়েছেন।
শহরের প্রেসক্লাবের পেছনে ডাকাতিয়া নদীর তীর, বড়স্টেশন মোহনা, হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের লেক ও আশপাশ, মিশন রোড, স্টেড়িয়াম এলাকা, টেকনিক্যাল এলাকা, ওয়ারল্যাছ, চাঁদপুর-রায়পুর সেতুসহ বেশ কিছু এলাকায় ভদ্রসমাজের সমাগম অনেকটাই কমে আসছে। তাদের অভিযোগ-হাঁটাচলা কিংবা অবসর যাপনের এসব উন্মুক্ত স্থানগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এতে সাধারল মানুষদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অপরদিকে পুলিশি অভিযানে এসব কিশোর গ্যাংরা আটক হলেও রাজনীতিক ততবির আর দরবার পার্টির মাধ্যমে তারা সহযেই ছাড়া পেয়ে যায়। পরে ওই দরবার পার্টির মধ্যস্থতায় অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ঘটনাগুলো সমাধান বা ধামাচাপা দেয়া হয়। তাছাড়া প্রতিটি এলাকায় কিশোর গ্যাংদের রাজনীতিক ‘বড় ভাইদের’ শেল্টার তো রয়েছেই। এসব কারণে পুলিশের তৎপরতা থাকলেও কিশোর গ্যাং দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, মাদক, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মত কিশোর গ্যাংদের বিষয়েও পুলিশ জিরো ট্রলারেন্স নীতিতে রয়েছে। এসব অপরাধগুলো আমরা কঠোর অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ করছি।
তিনি আরো বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের মারামারির ঘটনার কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হলেও ভুক্তভোগীরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায় না। ভুক্তভোগীরা আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে হয়।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩