দেশে চলমান তীব্র তাপদাহের মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে শরীয়তপুরের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে।
তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত তাপদাহে শরীয়তপুর সদর উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কিছু সড়কের কয়েকটি স্থানের বিটুমিন গলে গেছে।
সড়কের এসব অংশে ধীর গতিতে যানবাহন চালাতে হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেঘনা নদীর তীরবর্তী ভেদরগঞ্জের নরসিংহপুর ফেরিঘাট থেকে সদর উপজেলার মনোহর বাজার পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের বেশ কিছু জায়গা।
এই সড়ক দিয়ে সংযোগ হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলের।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে এই ৩১ কিলোমিটার সড়কে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সদর উপজেলার মনোহর বাজার গরুর হাট থেকে রুদ্রকর মাকশার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশের ৪ জায়গায় এবং ভেদরগঞ্জের উপজেলার বালিবাড়ির মোড় থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার অংশের ১৫ জায়গায় বিটুমিন গলে গেছে।
এসব জায়গায় ধীরগতিতে চলছে ট্রাক, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রাস্তায় ট্রাকের চাকার দাগ লেগে আছে। ট্রাকের চাকার সঙ্গে বিটুমিন লেগে উঠে যাচ্ছে।
পাথরবাহী ট্রাক চালিয়ে খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন মো. সোহরাব বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘ভেদরগঞ্জে ঢোকার আগে রাস্তায় কোনো জায়গায় পিচ গলা অবস্থায় পাইনি। ভেদরগঞ্জে ঢুকে দেখি একটু পরপর রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পিচ গলে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রোদের তাপ অনেক বেশি, তাই হয়ত পিচ গলে গেছে। আর একটা কারণ আছে। আগে রাস্তায় সলিড (ভালো) কাজ হতো। এখন বর্তমানে বিটুমিনের সঙ্গে পোড়া মবিল (ব্যবহৃত মবিল) ব্যবহার করা হয়, যার কারণে এসব রাস্তা পিচ গলে গেছে।’
মোটরসাইকেল আরোহী আইনজীবীর সহকারী নয়ন বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে দেখছি তীব্র তাপদাহে রাস্তার (বিটুমিন) পিচ গলে গিয়েছে। পিচ গলা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানো খুবই বিপদজনক। আগে এই রাস্তায় থেকে ৫০-৫৫ স্পিডে মোটরসাইকেল চালাতাম। আর এখন দুর্ঘটনা এড়াতে ২৫-৩০ স্পিডে চালাতে হচ্ছে।’
সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, বিটুমিন গলে যায়নি। কিছুদিন আগে কাজ হওয়ায় রাস্তায় ‘ব্লিডিং’ হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আগে দেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৫-৩৬ ডিগ্রি। সেই অনুযায়ী ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হতো। এখন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সড়কে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হবে।
জানতে চাইলে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জানা গেছে বিটুমিন গলে যায়নি, কিছুদিন আগে রাস্তার কাজ হওয়ায় রাস্তায় ব্লিডিং হয়েছে। মূলত অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে সড়কে এই ব্লিডিং হয়েছে।’
রাস্তার ওইসব অংশে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
‘রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি’ দাবি করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘বিটুমিন দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সড়কে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, যা ৪৯-৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয়। পাকা সড়কে বাতাসের তাপমাত্রার চেয়ে ২০ তাপমাত্রা বেশি ধরা হয়। বর্তমানে দেশের তাপমাত্রা ৪০ অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ পাকা সড়কের তাপমাত্রা ৬০ অতিক্রম করেছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। নতুন তাপমাত্রায় সড়কে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হবে।’
রাস্তা সংস্কারে পোড়া মবিল ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব কাজ কড়াকড়িভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিটুমিনের সঙ্গে পোড়া মবিল মেশানোর কোনো সুযোগ নেই।’ (দ্য ডেইলি স্টার)
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur