চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথে ফেরি কম চলায় দুর্ভোগ

শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে দুটি স্থানে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় ১৪ আগস্ট থেকে সবধরনের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে কমে গেছে এ রুটের নৌপথের ফেরি চলাচল। শুধু রাতে কয়েকটি ফেরি চলাচল করছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুট ব্যবহারকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।

বিআইডব্লিউটিএ ও শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, চাঁদপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিভিন্ন যানবাহন চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলাচল করে। এছাড়া পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে ট্রাকগুলো এ পথ দিয়ে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথের ফেরি পারাপার হয়ে চলাচল করে। সড়কটি দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে বেশি।

আগে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথে সাতটি ফেরি দিয়ে প্রতিদিন ৪৫০-৫০০টি যানবাহন পারাপার করা হতো। তবে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ঘাটে তেমন গাড়ি আসছে না। যাত্রীবাহী বাস ও শরীয়তপুর-মাদারীপুরের মাছ ব্যবসায়ীদের ছোট পিকআপ চলাচল করছে। গাড়ি কমে যাওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ ফেরি চলাচল কমিয়ে দিয়েছে। এখন দুটি ফেরি চলাচল করছে।

ভেদরগঞ্জের আলুর বাজার ঘাট থেকে রাতে দুটি এবং চাঁদপুরের হরিণাঘাট থেকে দিনে একটি ও রাতে দুটি ট্রিপ দেওয়া হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও মাছ ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে আলুর বাজার ফেরিঘাটে দেখা যায়, ঘাটের পন্টুনে তিনটি ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘাটে একটি যাত্রীবাহী বাস ও চারটি মাছ পরিবহনের পিকআপ দাঁড়িয়ে আছে। ফেরি ছেড়ে না যাওয়ায় তারা সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন।

নাসরিন আক্তার ছেলেকে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে নোয়াখালীতে যাওয়ার জন্য কমফোর্ট সার্ভিসের বাসে চড়েছেন। বেলা ১১টা থেকে আলুর বাজার ঘাটে অপেক্ষা করছেন। নাসরিন আক্তার বলেন, ‘যানবাহন কম থাকায় ফেরি ছাড়ছে না। আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’

কমফোর্ট সার্ভিসের চালক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ভোররাতে খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসি। দুপুরের পরপর চট্টগ্রামে পৌঁছে যাই। কিন্তু ফেরি না থাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাটে বসে থাকতে হয়। এ কারণে যাত্রীরাও বিরক্ত।’

মাছ ব্যবসায়ী ইউসুফ ফকির বলেন, ‘নোয়াখালীর রামগতি থেকে মাছ নিয়ে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। তবে কয়েকদিন ধরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক নেই। ৮-১০ ঘণ্টা ফেরির জন্য ঘাটে বসে থাকতে হয়। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

সাতক্ষীরা-চট্টগ্রামে চলাচলকারী ট্রাকচালক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘পেঁয়াজ, আদা ও কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম-সাতক্ষীরা যাতায়াত করি। তবে ১০-১২ দিন ধরে চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়কে আমাদের চলতে দিচ্ছে না। পদ্মা সেতু পারাপার হয়ে ঢাকা দিয়ে চলাচলে সময় ও খরচ বেশি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় বিআইডব্লিউটিএর আলুর বাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে। তিন বলেন, সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক না আসায় ফেরি কম চালানো হচ্ছে। এতে আমাদেরও অনেক লোকসান হচ্ছে। দুই মাসে অন্তত আট কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে হবে।

শরীয়তপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়কের দুটি স্থানে সড়ক সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এ কারণে সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মদ বলেন, দুটি বাজারের সড়কের যে অংশ সংস্কার করা হচ্ছে তা ১৮ ফুট প্রশস্ত। সংস্কার কাজ করার সময় সেখানে যানবাহন চলাচলের পরিস্থিতি থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে দুই মাস ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এসময়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করতে পারবে।

টাইমস ডেস্ক/ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Share