চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে ক্রসিং নামে অসংখ্য অবৈধ মৃত্যুফাঁদ, ঘটছে প্রাণহানি

পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ পরিবহন যোগাযোগ মাধ্যম হলো রেলপথ। অথচ নদী কিংবা সড়ক পথের মতো বাংলাদেশে এই পথেও জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই এই নিরাপদ পথেও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।

যার মূল কারণ অব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, রেললাইনের কাছ ঘেষে দোকানপাটসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। পাশাপাশি অবৈশ রেলক্রসিং, যা পারাপারে যানবাহনের চালক এবং পথচারিদের অসচেতনতা। ফলে প্রতিনিয়ত এই রেলপথ এবং রেলক্রসিংয়ে ঘটছে প্রাণহানি সহ দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনা থেমে নেই রেলযোগাযোগের অন্যতম রুট চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথেও।

সবশেষ ২৯ মে চাঁদপুর শহরতলীর মুন্সিবাড়ি এলাকায় রেলক্রসিং না থাকায় দ্রুতগতির ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেলো মেহেদী হাসান রুবেল নামে এক টগবগে যুবকের। সে চাঁদপুর চাঁদপুর পৌর ১৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এক বোন দুই ভাইয়েরর মধ্যে সে ছিলে সবার বড়। পারিবারিক জীবনে রুবেল বিবাহিত, তার অয়ন (৩) নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এই ঘটনায় অপর আহত মোঃ রাজন খান চাঁদপুর শহরতলীর ওয়াপদা গেট এলাকার রুস্তম খানের পুত্র।

রেল কর্তৃপক্ষের গাফলতিতে এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে একজন মা যেমন তার সন্তানকে হারালো, তেমনি একজন অবুঝ শিশু হারালো তার পিতাকে। এই ঘটনায় মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উল্লেখিত অবৈধ রেলক্রসিংয়ে কোন গেইট কিংবা গেইটম্যান নেই। অথচ রেললাইনের উপর দিয়ে এলজিইডির নির্মিত বড় এই পাকা রাস্তাটি শহর থেকে নেমে গেছে গ্রামের দিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর-লাকসাম দূরত্বে রেলপথ ৫২ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ রেলপথে গুরুত্বপূর্ণ ৩৭টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে অবৈধ রেলক্রসিং ১৩টি। এছাড়া ছোট ছোট আরো শতাধিক রেলক্রসিং রয়েছে। পাশাপাশি এই ৫২ কিলোমিটার রেলপথের খুব কাছঘেষে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা। শুধু তাই নয়, রেলের সম্পত্তি দখল করে রেললাইনে কাছ গড়ে উঠেছে শত শত হাট-বাজার।

এসব অবৈধ স্থাপনা ও রেলক্রসিংয়ে রেলগাড়ি যেমন ঝুঁকি নিয়ে চলছে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলক্রসিং পার হচ্ছে যানবাহন ও মানুষ। ফলে যখনতখন প্রাণহানিসহ ঘটছে দুর্ঘটনা।

অথচ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথের দুই পাশে অন্তত ১০ ফুট এলাকায় চলাচল আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধসহ ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে। এমনকি ওই সীমানায় গবাদিপশু প্রবেশ করলে তা বিক্রি করে এর অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিনা পরোয়ানায় দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রাখে। অথচ এসব নিয়ম যেনো কাগজে কলমে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেল ক্রসিংগুলোতে রেল কর্তৃপক্ষ ‘সতর্কীকরণ’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া ছাড়া তাদের যেন আর কিছুই করার নেই।

চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন মজুমদার জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে এই ৫২ কিলোমিটার রেলপথের ৯টি বৈধ রেলক্রসিং ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে আরও ২৬টি অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীতে অবৈধ রেলক্রসিং গুলোর মধ্যে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৫ টি রেলক্রসিং বৈধতা দিয়ে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে ১৩ টি রেলক্রসিং অবৈধ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ওই দুর্ঘটনাস্থল মুন্সিবাড়ি রেলক্রসিং।

তিনি আরও বলেন, অবৈধ রেলক্রসিং গুলোই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী অবৈধ স্থাপনাগুলো।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ডিভিশনাল অফিসার মাহবুবুল করিম জানান, অবৈধ রেলক্রসিং সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমরা কাজ করি অবৈধ স্থাপনা নিয়ে। গত দুই বছরে এ এলাকায় কোন উচ্ছেদ অভিযান চলেনি। তবে অচিরেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার চিন্তাভাবনা করছি।

প্রতিবেদকঃআশিক বিন রহিম,৩১ মে ২০২১

Share