ক্যাসিনো পরবর্তী অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের দুর্নীতির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণই বেশি। আদালতের নির্দেশে ১৬টি মামলায় অবরুদ্ধ করা টাকার পরিমাণ ৩৬২ কোটিও বেশি। আর সম্পদের পরিমাণ ৭৮ কোটি টাকার বেশি। খবর প্রথম আলোর।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জি কে শামীম) সম্পদই সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাঁর প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার।
এরপরই আছে যুবলীগের আরেক নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সম্পদ। বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাঁর ৩১ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার। আরেক সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সম্পদ বা নগদ টাকার পরিমাণ তেমন নেই বলে দুদক সূত্রে থেকে জানা গেছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হওয়ার পর ওই মাসের শেষ দিকে সংশ্লিষ্টদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এ পর্যন্ত ১৬টি মামলা করেছে সংস্থাটি। এসব মামলা হয়েছে ঠিকাদার জি কে শামীম, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও তাঁর ভাই রূপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব ও এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এবং যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার পরপরই তাঁদের বিরুদ্ধে আরও নিবিড় তদন্ত শুরু করে দুদক। তদন্তের শুরুতেই তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন দুদক কর্মকর্তারা। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁদের স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংকে থাকা টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে এসব সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংকের অর্থ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তদন্তে আরও সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলেও সেগুলোর বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, মামলার অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে কর্মকর্তারা প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নেন। অবৈধ সম্পদের মালিকেরা যাতে অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে তাঁদের সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে না পারেন, সে জন্য আদালতের মাধ্যমে সেগুলো ক্রোক বা ফ্রিজ করা হয়। তিনি বলেন, ‘অবৈধ সম্পদের মালিকদের ওই সম্পদ ভোগ করতে না দেওয়ার জন্য আমাদের নীতিগত যে সিদ্ধান্ত তার বাস্তবায়নে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
অবরুদ্ধ হওয়া সম্পদের মধ্যে জি কে শামীমের সম্পদ সবচেয়ে বেশি
শুদ্ধি অভিযান শুরুর পরপরই গত ২০ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন জি কে শামীম। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে আলাদা মামলা করে র্যাব।
গ্রেপ্তারের সময় শামীমের কার্যালয় থেকে তাঁর মায়ের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআরের কাগজপত্র জব্দ করে। এ ছাড়া শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চলার সময় নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলারও জব্দ করে র্যাব।
এর এক মাস পর দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। মামলায় জি কে শামীমের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। একই মামলায় শামীমের মা আয়েশা আক্তারকেও আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে শামীম ও তাঁর মায়ের আরও সম্পদের তথ্য আসে দুদকের হাতে। বিভিন্ন ব্যাংকে জমা পাওয়া যায় ৩২৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। আর জায়গা-জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট মিলিয়ে ৪০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব সম্পদের দলিলমূল্য এটা হলেও বাজারমূল্য অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
সম্রাটের সম্পদ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সম্পদের খুব বেশি তথ্য নেই কোথাও। এখন পর্যন্ত তাঁর স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র ৮৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা পেয়ে তা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
গত ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। মামলায় ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম। তবে তাঁকে গ্রেপ্তারে গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয় মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়। মাদক পাওয়ায় আরমানকেও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তদন্তে খালেদের সম্পদ পাওয়া গেছে বেশি
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ শুদ্ধি অভিযান’ শুরুর দিনই গ্রেপ্তার হন মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তাঁর বিরুদ্ধেই অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে আলাদা মামলা করে র্যাব।
এর ৩৩ দিন পর ২১ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে খালেদের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। মামলায় খালেদের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
তবে মামলার তদন্তে খালেদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যাংকে খালেদের নামে পাওয়া ৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আনুমানিক ৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়।
এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া
গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এবং তাঁর ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার স্থাবর কোনো সম্পদের তথ্য এখন পর্যন্ত পায়নি দুদক। তবে বিভিন্ন ব্যাংকে দুজনের জমা থাকা অর্থ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এনামুল হকের অবরুদ্ধ হওয়া টাকার পরিমাণ ১০ কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আর রূপন ভূঁইয়ার অবরুদ্ধ টাকার পরিমাণ ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার।
গত ২৩ অক্টোবর এ দুজনের বিরুদ্ধ মামলা করে দুদক। এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। এই মামলায় এনামুলসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁকে অবৈধ অর্থ অর্জনে সহায়তা করেছেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদ। তাই এই তিনজনকে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এনামুলের ভাই রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন দুদকের আরেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। মামলার এজাহারে বলা হয়, রূপন ভূঁইয়া অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক ও তাঁর ভাই রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে টাকা ও গয়না জব্দ করার পর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, চার কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে র্যাব।
অভিযান শেষে র্যাব জানিয়েছিল, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর টাকা এনে এনামুল বাসায় রাখতেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জায়গাও হতো না। তাই টাকা দিয়ে তিনি স্বর্ণালংকার কিনতেন।
অভিযান শেষ হওয়ার প্রায় তিন মাসের মধ্যেও তাঁদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। সূত্রাপুর থানায় মানি লন্ডারিং ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি করে চারটি মামলা করে র্যাব। ওয়ারী থানায় দুটি অস্ত্র আইনে এবং গেন্ডারিয়ার থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়।
সেলিম প্রধানের জব্দ হওয়া টাকা মাত্র ৫৪ লাখ
সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার হোতা সেলিম প্রধানের ব্যাংকে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আদালতের আদেশ নিয়ে ওই অর্থ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁর স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়নি।
১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়ে সেলিমে বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। গত ২৭ অক্টোবর মামলাটি হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁকে নিয়ে তাঁর অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে দুটি মামলা হয়।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা হয়। গত ২৯ অক্টোবর মামলা দুটি করেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় আনিসের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সুমি রহমানের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেব বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা আনিসের নামে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গত ২৭ অক্টোবর মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
লোকমান হোসেনের মামলার তদন্ত পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাঁর ২ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৪ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুর দিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে লোকমানকে রাজধানীর মণিপুরিপাড়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তেজগাঁও (ডিএমপি) থানায় মামলা করা হয়।
হাবিবুর রহমান মিজান
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩১ টাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৬ নভেম্বর মামলা করেন উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলার তদন্ত পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাঁর ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আনুমানিক ২০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানে গত ১১ অক্টোবর সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন হাবিবুর রহমান মিজান। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
তারেকুজ্জামান রাজীব
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা রাজীবের ১ কোটি ১২ লাখ ৩১ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর একটি গাড়ি জব্দ করে দুদকে নিয়ে আসা হয়েছে। আর দুটি গাড়ি আটক করে মোহাম্মদপুর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানে গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তারেকুজ্জামান রাজীবকে। অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
এনামুল হক আরমান
সম্রাটের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। বিভিন্ন ব্যাংকে তাঁর ২ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাটের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরমানও। গ্রেপ্তারের সময় মদ্যপ ছিলেন আরমান। তাঁর কাছে মাদকও পাওয়া যায়। সে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
জাকির হোসেন
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। গত ১৩ নভেম্বর মামলাটি হয়। মামলার তদন্ত পর্যায়ে জাকিরের ব্যাংক হিসাবে পাওয়া যায় ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। আদালতের নির্দেশে ওই টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর ৩০ অক্টোবর ভোলা থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
শফিকুল ইসলাম
সাড়ে ১৪ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২১ নভেম্বর হওয়া ওই মামলা করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
মামলার তদন্ত পর্যায়ে কোনো ব্যাংকে তাঁর নামে জমা অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ পেয়ে আদালতের মাধ্যমে তা ক্রোক করা হয়েছে।
মমিনুল হক সাঈদ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অপসারিত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদে অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার। ২০ নভেম্বর মামলাটি হয়।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁর সম্পদ জব্দের আবেদন করেছে সংস্থাটি। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এটি আদালতের আদেশের অপেক্ষায় আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে এখন পর্যন্ত তাঁর ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।
শফিকুল আলম
কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজের ২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। গত ৩০ অক্টোবর মামলাটি করেন সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
সবশেষ পাওয়া তথ্যমতে, শফিকুল আলমের নামে ব্যাংকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা আছে। ওই টাকা অবরুদ্ধ করতে আদালতে আবেদন করেছে দুদক।