Home / চাঁদপুর / অনিশ্চয়তায় হাঁটছে চাঁদপুর মেরিন একাডেমি : শিক্ষার্থীরা হতাশ
marine-academy
চাঁদপুর মেরিন একাডেমি

অনিশ্চয়তায় হাঁটছে চাঁদপুর মেরিন একাডেমি : শিক্ষার্থীরা হতাশ

নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে অনিশ্চয়তার দিকে হাঁটছে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি চাঁদপুর এর শিক্ষা কার্যক্রম।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়ে প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক, ক্রাফট ইনস্ট্রাকটরের খেলার মাঠ, মসজিদ, শিক্ষকদের জন্য স্থায়ী আবাসিক ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধিনে দেশের ৩৫ জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মেরিন ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়।

এ প্রকল্পের আওতায় দেশের শুধুমাত্র ৫ জেলায় মেরিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের ৫টি ভাগ্যবান জেলার মধ্যে চাঁদপুর-রায়পুর সংযোগ সেতুর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুর মেরিন একাডেমি নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।

চাঁদপুরে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা হলে সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও অবকাঠামাতোগত নানা সমস্যার কারণে বিঘœ হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৩টি ব্যাচে ৩শ’ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমকে গতিশীল করতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক ও সরঞ্জামাদি। প্রতিষ্ঠানটিতে ১শ’টি পদ থাকলেও মাত্র ৩৫ জন শিক্ষক ও প্রশিক্ষক ও কর্মচারি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৩জন। প্রতিষ্ঠানটিতে ল্যাব পরিচালনার জন্যে ক্রাফট ইনস্ট্রাকটরের প্রয়োজন থাকলেও আজ পর্যন্ত এই পদগুলো শূন্য রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্যে তিন তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রবাস থাকলে তত্ত্ববধানের জন্যে নেই কোনো হল সুপার।

৪ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে কথা হলে শিক্ষার্থীরা জানায়, কারিগরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হাতে কলমে শিক্ষা। কিন্তু আমরা ব্যবহারিক ক্লাস থেকে বঞ্চিত রয়েছি। প্রশিক্ষক, ক্রাফট ইনস্টাক্টর, পল্লী বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমরা পাঠগ্রহণ থেকে পিছিয়ে পড়ছি। পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলে আমাদের ফলাফল আরো ভালো হতো এবং আমাদের শিক্ষা আরো অর্থবহ হতো।

প্রতিষ্ঠানটির ইলেক্ট্রিক্যাল বিষয়ের প্রশিক্ষক মো. সিরাজুল আবেদীন পারভেজ বলেন, ‘আমাদের ৯টি ল্যাব রয়েছে। ল্যাব পরিচালনা করার জন্যে পর্যাপ্ত উপকরণও রয়েছে। কিন্তু ল্যাব পরিচালনায় যিনি সহযোগিতা করবেন, সেই ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে কেউ নেই। তিনি আরো বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষক কম রয়েছে। পদগুলো পূরণ হলে পাঠদান কার্যক্রম আরো গতিশীল হতো। আমরা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ পাঠদান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

নান প্রকাশে অনিশ্চুক এক শিক্ষক জানায়, এই প্রতিষ্ঠানটির সামনে যে ব্রিজ রয়েছে সেখানে একটি ছিনতাইকারি চক্র রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ওই ছিনতাইকারীদের শিকার হচ্ছে। গত কয়েক মাসে ওই চক্রটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেকগুলো মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। তিনি এ বিষয়টি নজরে আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।

এ বিষয়ে কথা হলে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি চাঁদপুর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আকরাম আলী বলেন, ‘ আমি দেড় মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। বর্তমানে আমাদের শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে একথা সত্য। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অল্প জনবল দিয়ে আমরা এ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের যেভাবে পড়াতে চাই, ব্যবহারিক ক্লাস নিতে চাইÑ তাতে নূন্যতম ২৫জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু এখানে আছে মাত্র ১৫জন শিক্ষক।’

তিনি আরো জানান, এখানে শিক্ষকদের জন্য কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই, লেখার মাঠ, সুইমিংপুল, নামাজের জন্য মসজিদসহ অনেক কিছুর সংঙ্কট রয়েছে। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে গ্যাস সংঙ্কট। প্রতি মাসে আমাদের ৫০ হাজার টাকার গ্যাস বিল দিতে হয়।

এসব সমস্যাগুলো না থাকলে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল হতো। তনি এ প্রতিষ্ঠানটির সমস্যাগুলো সমাধানে কতৃপক্ষের সুদষ্টি প্রত্যাশা করেন।

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম

Leave a Reply