উপজেলা সংবাদ

চাঁদপুর উপজেলা ভূমি অফিস : সমস্যা ও সম্ভাবনা

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর :

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যায়ে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় আখড়ায় পরিণত হয়েছে ভূমি অফিস। কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে এসব দুর্নীতির চিত্র ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। স্বল্প খরচে ও দ্রুতগতিতে জমিসংক্রান্ত কাগজপত্র প্রাপ্তি এবং ভূমি অফিস ডিজিটালাইজেশনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। জমির ভলিউম, রেকর্ডপত্র ও পর্চা, নকশাসহ প্রয়োজনীয় নথি এখন যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে।

সম্প্রতি একনেকের সভায় এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চাঁদপুরও ইতোমধ্যে ভূমি অফিস ডিজিটাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে জেলার ভূমি অফিস ডিজিটাল করার ঘোষণা এসেছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে।

যারা ইতোমধ্যে ভূমি অফিসের সেবা পেতে শুরু করেছেন তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন। ডিজিটাল ভূমি অফিসের নানা খোঁজখবর নিয়ে চাঁদপুর টাইমসের বিশেষ প্রতিবেদন।

বাংলাদেশে সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়ার কাজ হচ্ছে জমির কাগজ বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধান করা। আগের দিনে একটি জমির খতিয়ান পেতে আবেদন করলে ৬ মাস এমনকি এক বছর লেগে যেত। এখন তা পেতে সময় লাগে মাত্র তিনদিন! যে কেউ জমির খতিয়ান পেতে এখন আর অফিসেও যেতে হচ্ছে না। ডাক যোগে বা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে আবেদন করলেই হচ্ছে।

সাথে ফিরতি খামের সাথে ডাক টিকিট লাগিয়ে দিলেই সব কাজ শেষ। আগে অনেক টাকা ঘুষ লাগতো। কিন্তু এখন ঘুষ গ্রহণের কোনো পথ খোলা নেই। একটি জমির খতিয়ান পেতে খরচ হচ্ছে সব মিলে ২৪ টাকা। এছাড়া আবেদনের জন্য ফি দিতে হচ্ছে ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা। প্রতি কপি খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। তারপর কিছু লোকজন জানান, তাদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নেওয়া হচ্ছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে আধুনিক জরিপ যন্ত্রপাতি (জিপিএস, ইটিএস, ডাটা রেকর্ডার, কম্পিউটার, ম্যাপ প্রসেসিং সফটওয়্যার, প্লাটার, প্রিন্টার ইত্যাদি’র সাহায্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নকশা ও খতিয়ান প্রণয়নের জন্যে একটি পাইলট কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে।

জানা যায়, আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় ডিজিটালাইজড ভূমি অফিস স্থাপন করা হবে। এতে করে জাল-জালিয়াতি ও জনদুর্ভোগ বহুলাংশে কমে আসবে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা চৌধুরী আশরাফুল করিম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘দেশের ৪৫ উপজেলায় ডিজিটালাইজড ভূমি অফিস স্থাপন করা হয়েছে। চাঁদপুর এখনো তথ্য প্রযুক্তিতে সম্ভাবনাময় হিসেবে রয়েছে চাঁদপুর ভূমি অফিস। আমরা চাঁদপুরেকেও ডিজিটালাইজড ভূমি অফিস করার জন্য আবেদন করেছি। তারপরও সরকারে নীতি নির্ধারণের ব্যাপার। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলার সাথে মিল রেখে চাঁদপুরে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকারিভাবে না হলেও আমারা নিজেদের উদ্যোগে চেষ্টা করছি ডিজিটালাইজড ভূমি অফিস করার জন্যে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা আমাদের কাছে ভূমির সমস্যা নিয়ে আবেদন করে, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করে দিচ্ছি। আমরা সরকারি নিয়ম অনুসারে আবেদন ফি নিচ্ছি ২০ থেকে ২৫ টাকা। ডিজিটালাইজড ভূমি অফিস না হলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই। অফিসের সকল স্টাফ এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে।’

তিনি দালালদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘চাঁদপুর ভূমি অফিসে কোনো প্রকার দালাল নেই।’

তিনি বলেন, ‘এই অফিস দালালমুক্ত। এখানে দালালদের কোনো অবস্থান নেই। কাজের জন্যে আমাদের কাছে যে আসবে, তার জন্যে আমাদের দরজা খোলা।’

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ০৫:০৭ অপরাহ্ন, ২২ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার ০৭ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি

Share