আগামি ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদসহ ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ডের গ্রামে-গঞ্জে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। ব্যস্ত সময়পার করছেন প্রার্থীরা।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভােটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে মাইকিংয়ে চলছে নির্বাচনী প্রচারণার গান-বাজনা। ভােটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা। নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর অভিজ্ঞতার ধারে কাছে নেই অন্য কোন চেয়ারম্যান প্রার্থী। অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিক মিয়া এর পূর্বে নির্বাচনে অংশ নেন তবে পরাজিত হন। এছাড়া অন্য প্রার্থীরা এবছর প্রথম নির্বাচন করছেন। তবে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র জাকের পার্টির গোলাপফুল মার্কার প্রার্থী এই ইউনিয়নে রয়েছে।
জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ-মধ্যাংশে বাগাদী ইউনিয়নের অবস্থান। এ ইউনিয়নের দক্ষিণে ও পশ্চিমে বালিয়া ইউনিয়ন, উত্তর-পশ্চিমে তরপুরচণ্ডী ইউনিয়ন, উত্তরে ডাকাতিয়া নদী ও মৈশাদী ইউনিয়ন এবং পূর্বে শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়ন ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়ন অবস্থিত।
বাগাদী ইউনিয়ন চাঁদপুর সদর উপজেলার আওতাধীন ৮নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম চাঁদপুর সদর থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৬২নং নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৩ এর অংশ।
এই ইউনিয়নে ইসলামপুর গাছতলা, বাগাদী ও নানুপুর দরবার শরীফ রয়েছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের মােট ভােটার সংখ্যা ২৬ হাজার ৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৯০ জন এবং মহিলা ১২ হাজার ২৭৮ জন। এ জনপদের মানুষ অনেক ধার্মিক, শিক্ষা-দীক্ষা চাকরিতে এগিয়ে রয়েছে।
এই বছর বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন তারা হলেন: বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল, ইসলামি আন্দোলনের হাতপাখা প্রতিকের প্রার্থী মো. নেয়ামত উল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বরকত উল্ল্যাহ খান চশমা প্রতিক, মানিক মিয়া, জাকের পার্টি মুনসুর বেপারী গোলাপফুল প্রতিক পেয়েছেন। সকল প্রার্থীদের মধ্যে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে নৌকার প্রার্থী বেলায়েত হোসেন গাজী এগিয়ে রয়েছেন।
তিনি বাগাদী ইউপির ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি। তার পরে নির্বাচনী অভিজ্ঞতার দিকে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থী মানিক মিয়া। তিনি এর পূর্বেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হয়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বরকত উল্ল্যাহ খান চশমা প্রতিক নিয়ে এবছরই প্রথম নির্বাচন করছেন। এর পূর্বে তিনি দলীয় প্রতীক চেয়েছেন কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেন নি। চশমা প্রতীকের সাথে প্রথম নির্বাচন করছেন।
ইসলামি আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মো. নেয়ামত উল্লাহ ও জাকের পার্টির মুনসুর বেপারীর গোলাপফুল প্রতিক। এছাড়া এই ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য ৩৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৫ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী না থাকায় সংরক্ষিত আসনে (১,২,৩) পারুল আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ভােটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি থেকে কোনাে প্রার্থী না থাকায় বাগাদী ইউনিয়নে মূল লড়াই হবে নৌকার সাথে চশমা প্রতীকের।
১নং ওয়ার্ডের তালা মার্কার মেম্বার প্রার্থী মোঃ শরীফ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এই ওয়ার্ডে মোট মেম্বার প্রার্থীর সংখ্যা ৫ জন। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। একটি কুচক্রী মহল ভোট কারচুপি করবে বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। আমি এই এলাকার সন্তান হিসেবে প্রশাসনের কাছে অবাধ ও সুষ্টু নির্বাচনের পরিবেশ কামনা করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জনগনের ভোটে বিজয়ী হবো।
৪নং ওয়ার্ডের ফুটবল মার্কার মেম্বার প্রার্থী মোঃ মাসুদ আখন্দ বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, ইনশাল্লাহ আগামী ১১ নভেম্বর আমি ভোটারদের ভোটে জয়যুক্ত হবো।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত (১,২ও ৩) সংরক্ষিত আসনের পারুল বেগম বলেন, আমি এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে গতবার মেম্বার হয়েছি। একই ওয়ার্ড থেকে এই বছর জনগনের ভালবাসায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছি।
চেয়ারম্যান পদে (স্বতন্ত্র) চশমা প্রতীকের প্রার্থী মো. বরকত উল্ল্যাহ খান বলেন, এই ইউনিয়নের জনগন আপনারা আমাকে চশমা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আমি নির্বাচিত হলে সরকারের দেওয়া চেয়ারম্যান পদের পেছনে যত অনুদান রয়েছে তা শতভাগ নিয়ে এসে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমি ৫ বছরপর কখনো বলবো না আমার কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে, বাকি রয়েছে। আবার সুযোগ দেন। সকল দায়িত্বগুলো শতভাগ পালন করবো।
তিনি আরও বলেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটররা যাওয়ার পর কোন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে আমাদের ভোটারদের ভোট প্রদানে বিঘ্ন না ঘটে, এ বিষয়ে প্রশাসন তাদের দায়িত্ব সচেষ্টভাবে পালন করবেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর অত্র ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। আমি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনিত নৌকা প্রতিকের একজন প্রার্থী। আমার বিগত দিনের কর্মকান্ড বিচার বিবেচনা করে ইউনিয়নবাসী বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন। আমি জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। আল্লাহ যদি সহায় থাকেন ইনশাল্লাহ ১১ তারিখ বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে।
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট