শিশু পার্কে শিশু কই? সাইনবোর্ড স্কুল ড্রেস নিষিদ্ধ, ভেতরে অন্য চিত্র
চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ আশিকাটিতে অবস্থিত ফাইভস্টার শিশু পার্কটিতে উঠতি বয়সের যুবক যুবতীদের প্রেম-বিনোদন ও অশ্লীলতার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্যে সর্বোত্তম ব্যবস্থা কিংবা শিশুদের জন্য তৈরি করা হলেও ওই পার্কের ভেতরের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। ২৫ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ‘নগ্নতার কারখানা’য় প্রবেশ করার ‘সু-সেবা’ পাওয়া যায় এখানে। বসার জন্যে সুন্দর সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে। আর অশ্লীলতা চালানোর জন্যও আছে সু-ব্যবস্থা!
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সরেজমিনে মূল ফটকের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো, ক্যান্টিনে দু’চারজন যুবক-যুবতী বসে খোশগল্পে মেতে আছে। তারপর আরেকটু সামনে যেতেই শিশুদের হেলিকপ্টার রাইডের পাশেই এক জোড়া যুবক-যুবতী প্রেম-ভালোবাসার অন্তরঙ্গ মুহূর্তে মজে আছে।
মনে হচ্ছে আজই এখানেই বিয়ে করে বাসরও সেরে নেবেন। তারাই এতটাই মগ্ন ছিলো যে, সাংবাদিক পিছন থেকে ছবি তুলছে তার কোনো খেয়ালই নেই। পুকুরের পাড় দিয়ে আরেকটু সামনে যেতেই এক লোক বললো, ভাই কেমন আছেন? জিজ্ঞাসা করলাম, সাথে কে আপনার বউ? বললো, না; আমার ভাবি।
আরেকটু সামনে চোখ দিতেই হলুদ আর কালো রংয়ের দু’জন কপোত-কপোতীর চুম্বন দৃশ্য অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকেও হার মানায়। দৃশ্যটি তোলার আগেই চুম্বন পর্ব শেষ হয়ে গেলো। তাদের ছাপিয়ে সামনে এগোতেই দেখা গেলো এক নয়, কয়েক জোড়া কপোত-কপোতী অন্তরঙ্গ মুহূর্ত পার করছেন।
এখানে দেখা গেলো, কোনো যুবক তার যুবতী বান্ধবীর কোলে শুয়ে আছেন, কেউ ওড়নার নিচে মুখ লুকিয়ে অন্য দুনিয়ায় মগ্ন, কেউবা আবার যৌন উত্তেজনায় ছটফট করছেন। এক মেয়েকে বলতেও শোনা গেলো, এখানে মাটিতে শোবো কি করে?
তাদের সামনে দিয়ে কে গেলো না গেলো তার কোনো খেয়ালই তাদের নেই। অশ্লীলতার মিলনমেলায় তারা আজ ফাইভ স্টারের অতিথি। কেউ দেখলে দেখুক, কিছুই যায় আসে না। সব ছাপিয়ে আবার ক্যান্টিনের সামনে যাওয়ার আগেই স্কুল ড্রেস পরিহিত দু’ মেয়ে। কাঁধে ব্যাগও রয়েছে। সাথে আছে আবার ৪-৫টা ছেলে। এবার বের হওয়ার পালা। বের হওয়ার আগেই মূল ফটকের সামনে গাছের উপর বড় করে সাঁটানো স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। টিকেট কাউন্টারে জিজ্ঞাস করতেই ক্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো টিকেট কালেক্টর। কোনো ভাবান্তরই নেই তার, ভেতর মনে হচ্ছে এই প্রশ্নটা নিত্যদিন শুনেছেন তিনি।
এরকম পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ফ্যামিলি তাদের মা, বাবা, স্ত্রী সন্তানসহ প্রবেশ করে বিব্রত হতে হয়। এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে সহায়তা করছেন এলাকারই কিছু প্রভাবশালী লোক।
এ বিষয়ে ফাইভ স্টারের স্বত্ত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন লিটনের সাথে মোবাইলে (০১৭১৩১৭৩৬৩৯) বহুবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ফাইভ স্টার পার্কের বেশির ভাগ অংশই পৌরসভা নিয়ে যাবে। পৌর কমিটির সাথে কথা হয়েছে। তারা যা করবে তাই হবে। আর বেশির ভাগ সাংবাদিককেই উনি শুক্রবার দেখা করতে বলেন। কারণ ওই দিন নাকি তিনি স্বশরীরে পার্কে উপস্থিত থাকেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ শুধুমাত্র অপকর্ম কিংবা অসামাজিক কার্যকলাপের জন্যই বেঁছে নেয় চাঁদপুরের ফাইভ স্টার শিশু পার্ক ও পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন ‘কৃতীকুঞ্জ শিশু পার্ক’। যারা শুধু মাত্র বিনোদনের জন্য স্ত্রী, সন্তান, বাবা মা নিয়ে ঘুরতে আসেন তাদের জন্য বড় স্টেশনের মোলহেড ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোথাও সুস্থ পরিবেশ তৈরি হয় নি।
video তে দেখুন…
মো. জাবেদ হোসেন, ক্রাইম রিপোর্টার
|| আপডেট: ০৯:৪৫ অপরাহ্ন, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সোমবার
এমআরআর