বিদায়ী চাঁদপুর পৌর প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক সয়লাব

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের (ডিডিএলজি) উপ-পরিচালক ও চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক উপ-সচিব মো. গোলাম জাকারিয়াকে মেহেরপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে বদলি করা হয়েছে।

গত ১১ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-২ শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ নূর এ আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে এ পদে বদলি করা হয়। বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন মো. গোলাম জাকারিয়া।

২১ ডিসেম্বর রোববার চাঁদপুর পৌর প্রশাসক থেকে বিদায় নেন। তিনি জানান, তিনি প্রথমে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করবেন এর পর নির্ধারিত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। যোগদান করতে হয়তো ১৫ দিন সময় লাগবে বলে তিনি জানান।

এদিকে ৫ আগস্টের পর চাঁদপুরে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তার বদলির খবরে চাঁদপুর জুড়ে তাৎক্ষণিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখেন অনেকে বিরূপ পোস্ট ও মন্তব্য করতে দেখা যায়। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেও লিখেছেন বিভিন্ন মন্তব্য।

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মো. গোলাম জাকারিয়ার একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পৌরবাসীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছিল। তার সময়ে এক বছরের মাথায় একাধিকবার পৌরসভার পানির বিল বৃদ্ধি ও পৌর ট্যাক্স বাড়ানোর কারণে পৌরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অথচ সেই অনুপাতে পৌরসভার নাগরিক সেবার মানে কাক্সিক্ষত কোনো উন্নয়ন হয়নি। কয়েক দফায় পানির বিল ও ট্যাক্স বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে জেলার অসংখ্য সংগঠন যৌথভাবে মানববন্ধনও করেছে।’

অভিযোগে অনেকে জানান, ‘গোলাম জাকারিয়া দায়িত্ব নেবার পর, চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারে অবস্থিত পৌরসভার ১২৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী দাতব্য চিকিৎসালয় বন্ধ করে দেন। ‘মানবতার বাতিঘর’ খ্যাত গরিব ও অসহায় মানুষদের এই চিকিৎসালয়টি বন্ধ করে দেওয়ায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাবেক জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে এই দাতব্য চিকিৎসালয়টি খুলে দেওয়ার দাবি জানালেও কোন কর্ণপাত করেননি তিনি। কিন্তু প্রায় অর্ধ বছর পেরিয়ে গেলেও, গরিবের চিকিৎসা সেবার এই প্রতিষ্ঠানটি আজো চালু করা হয়নি।

এক অভিযোগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এক ঠিকাদার জানান, ‘ অনিয়মের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন আর্থিক অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে নিয়ম বর্হিভূত ব্যাক্তি বিশেষ ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছেন। যা আমরা একজন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার কাছে আমরা কোনদিন আশাকরিনি। তদন্ত করলে এসব অনিয়মের ফিরিস্তি সামনে আসবে বলে তিনি দাবী করেন।

অপর এক অভিযোগে বলা হয়,‘এছাড়া চাঁদপুর শহরে যানজট নিরসনে অটোরিক্সাগুলোকে দুই কালারের রঙ লাগিয়ে চালকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা আদায় করা হলেও সেটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো পৌর এলাকায় ব্যাটারী ও প্যাডেল চালিত ৫০০টি রিকশার লাইসেন্স দিয়েছেন তিনি। যা অতীতে নতুন করে কোন লাইসেন্স দেওয়ার বিধানকে তোয়াক্কা করেননি।
এছাড়াও পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রাস্তাঘাট সংস্কারে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ পেতে সীমাহীন ভোগান্তি, এমনকি ইলিশ চত্বরে অপরিকল্পিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সৌন্দর্য নষ্ট করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।
পৌর বাসিন্দারা বলছেন, এসব সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে এবং পৌর প্রশাসনের সঙ্গে নাগরিকদের দূরত্ব বেড়েছে। ফলে তার বদলির খবরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই সন্তুষ্টির প্রকাশ ঘটছে।

অপরদিকে পৌরসভার প্রশাসক উপ-সচিব মো. গোলাম জাকারিয়ার বদলীর খবরে সিএনজি মালিক সমিতির নেতা ওমর ফারুক লিখেন, ‘উনি যেখানে যাবে সেই জায়গাটাকে অপবিত্র করবে। তার মতো স্বার্থপর প্রশাসনের মধ্যে আছে কিনা আমার জানা নেই।’
চাঁদপুর চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুনাল রশিদ লিখেন, ‘বছরে ৪৫০ টাকা হোল্ডিং টেক্স দিতাম, এ বছরে ৪ হাজার টাকার বিল পাঠিয়েছে আমার বাড়িতে, শহরের বাসায় একই বিল দিয়েছি, ২ টার টেক্স দেইনাই এখনো।
পিন্টু খান নামে পৌরসভার এক নাগরিক লিখেন, ‘অনেকের কাছে শুনতেছি কারো না কারো নাম বেঁচে চামচ দিয়ে সে খায়। শুধু বদলি না উপযুক্ত প্রমাণ সহকারে আইনের হাতে তুলে দেওয়া প্রয়োজন মনে করি।’

ইমতিয়াজ ইফতি নামে একজন লিখেন, ‘এমন কিছু করা মানুষের উচিত নয়, তার পরিবর্তন হলে মানুষ শুকরিয়া আদায় করে। কি পরিমান মানুষের মনে কষ্ট হয়েছে, তার বিদায়ের কথা শুনে মানুষ শুকরিয়া আদায় করে। এটি অভিশাপ।’

চাঁদপুর জেলা কমিটি পুলিশিং এর সাধারণ সম্পাদক সুফি খাইরুল ইসলাম লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। এই প্রশাসক নোটিশ না দিয়ে, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কার্যালয়ের ভীতরে থাকা সকল মালামালসহ অফিস স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলেছে। আমাদের প্রায় সাড়ে দশ লাখ টাকার মালামাল ভেঙ্গে লুটপাটের সুযোগ করে দেন এই প্রশাসক। উপর ওয়ালার এর বিচার করবেন।’
জি-নিউজ নামে একটি নিউজ পেইজে লিখেন, ‘বাবুরহাট ট্যাক্সি ক্যাব স্ট্যান্ডে পৌরসভার টোল আদায়ে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে, পৌরসভার নির্ধারিত ২০ টাকা টোলের পরিবর্তে গাড়ি প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা নেয় প্রমাণসহ পত্রিকায় নিউজ করার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া।
সোস্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে সদস্য বিদায়ী পৌর প্রশাসক গোলাম জাকারিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছি এতে অনেকের মনে কষ্ট থাকতে পারে এটা অসাভাবিক কিছু নয়। তবে আমি সোস্যাল মিডিয়া দেখার সুযোগ পাইনি তাই এব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি।

পৌর সভার হোল্ডিং টেক্স অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযোগ থাকতে পারে সেটা আমি পৌরসভার উন্নয়নের জন্যই করেছি।তবে অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম/
২২ ডিসেম্বর ২০২৫